৪২২ কোটি টাকার শুল্ক-কর ফাঁকি দিয়ে বিদেশি কোম্পানি পালিয়েছে
কোরিয়ান মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান নর্থপোল (বিডি) লিমিটেড বাংলাদেশে রপ্তানির আড়ালে দীর্ঘদিন ধরে বন্ড সুবিধা নিয়ে ৪২২ কোটি টাকার বেশি শুল্ক ও কর ফাঁকি দিয়ে আসছিল। প্রতিষ্ঠানটি শুধু ফাঁকি দেয়নি, বরং কার্যক্রম বন্ধ করে মালিকরা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গেছেন। তাদের পালানোর কারণে এই পরিমাণ অর্থ আদায়ের কোনো সম্ভাবনা নেই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। প্রতিষ্ঠানটি বকেয়া শুল্ক ও কর পরিশোধের জন্য চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেট থেকে একাধিকবার চিঠি ও দাবিনামা পাঠানো হলেও কোনো ফল পাওয়া যায়নি।
প্রতিষ্ঠানটি ছিল বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) আওতাধীন একটি শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান। ২০০০ সালে বন্ড লাইসেন্স পাওয়ার পর, এই প্রতিষ্ঠানটি কাঁচামাল আমদানি করে পণ্য রপ্তানি করার জন্য শুল্ক-কর মওকুফ সুবিধা পেত। তবে, কিছু সময় পর থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি রপ্তানি কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় এবং কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করে। এক্ষেত্রে, কাঁচামাল আমদানি করার পর রপ্তানির কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি, যা অর্থপাচারের ইঙ্গিতও দেয়।
এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি ২০০৩ সালে নিরীক্ষার জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করলেও সেই তদন্তের ফলাফল বের হতে সময় লেগে যায় এবং ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যায়। তদন্ত প্রতিবেদন অনুসারে, প্রতিষ্ঠানটি বন্ড সুবিধা নিয়ে কাঁচামাল আমদানি করলেও পণ্য উৎপাদন বা রপ্তানি করেনি, বরং কাঁচামাল খোলাবাজারে বিক্রি করেছে। এর ফলে, প্রযোজ্য শুল্ককর বাবদ ১৭৯ কোটি ৫৫ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৫ টাকা শুল্ক ফাঁকি হয়েছে।
এছাড়া, ২০০৪ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন নিরীক্ষায় ২৪২ কোটি ৫৯ লাখ ৬১ হাজার ৩০ টাকা শুল্ক-কর ফাঁকি উদ্ঘাটিত হয়েছে। এই অতিরিক্ত শুল্ক ও কর ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগে সাতটি দাবিনামা জারি করা হয়। সব মিলিয়ে, ৪২২ কোটি ১৫ লাখ ৫৭ হাজার ৬৫৬ টাকা বকেয়া রাজস্ব আদায়যোগ্য বলে এনবিআর সূত্রে জানা গেছে।
তবে, এনবিআর এবং চট্টগ্রাম বন্ড কমিশনারেটের পক্ষ থেকে একাধিকবার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু মালিকরা পালিয়ে যাওয়ার পর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব হয়নি। একই সঙ্গে, প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন প্লটের ভাড়া, বিদ্যুৎ, পানি এবং গ্যাস বিলও পরিশোধ করা হয়নি। ফলে, প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপও কার্যকর হয়নি।
বর্তমানে, প্রতিষ্ঠানটির নিলাম করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ বা বেপজা কর্তৃক প্রতিষ্ঠানটির মালামাল নিলামে তোলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। তবে, সত্ত্বেও অনেকেই মনে করছেন, এসব মালামাল বিক্রি করেও বকেয়া শুল্ক-কর আদায় করা সম্ভব হবে না। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আরও তদন্ত চলছে এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাস্টমস কর্মকর্তাদের কোনো ধরনের গাফিলতি ছিল কিনা তা খতিয়ে দেখারও উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।