সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় পুশ ইন অব্যাহত, দিনাজপুর-মেহেরপুর-ঠাকুরগাঁওয়ে আটক ৩২ জন
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশিদের পুশ ইন বা ঠেলে পাঠানোর ঘটনা অব্যাহত রেখেছে ভারত। মঙ্গলবার ভারতের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ ৩২ জন নারী, পুরুষ ও শিশুকে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করিয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে ১৩ জন, মেহেরপুরে ১২ জন এবং ঠাকুরগাঁওয়ে ৭ জনকে সীমান্ত এলাকায় রেখে যায় তারা। স্থানীয়দের সহায়তায় বিজিবি সদস্যরা তাদের আটক করে থানায় হস্তান্তর করেন।
দিনাজপুরের বিরল উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের সীমান্ত পিলার ৩২২/৬-এস এলাকায় ভারত থেকে ঠেলে দেওয়া ১৩ জনকে আটক করে বিজিবির ৪২ ব্যাটালিয়নের এনায়েতপুর বিওপির টহল দল। পরে বিজিবির প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, আটকরা হলেন—খাইরুল ইসলাম, হাসিনা বেগম, খোতেজা, হাসান, হাবিব, মাসুদ, আবদুল্লাহ, হাবিল, হাকিম, শাহানুর ইসলাম, কোহিনূর, শাকিল ইসলাম ও রোহান ইসলাম। জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানান, ১০-১৫ বছর আগে দালালের মাধ্যমে হরিয়ানা ও দিল্লি গিয়ে নির্মাণ, কৃষিকাজ ও হোটেলকর্মীর চাকরি করছিলেন। সম্প্রতি ভারতীয় পুলিশ তাদের ধরে সীমান্তে নিয়ে আসে এবং ৯ জুন পুশ ইন করে। তাদের বাড়ি কুড়িগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়।
মেহেরপুরের মুজিবনগরের আনন্দবাস সীমান্ত দিয়ে ভোররাতে বিএসএফ ১২ জনকে ঠেলে দেয়। বিজিবির চুয়াডাঙ্গা-৬ ব্যাটালিয়নের কোম্পানি কমান্ডার নাজমুল হাসান জানান, পশ্চিমবঙ্গের সোনাপুর মাঝপাড়া সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন করা এসব ব্যক্তির মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে। তারা বৈধ কাগজপত্র না থাকায় ভারতে অবৈধভাবে অবস্থান করছিলেন এবং ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাদের আটক করে সীমান্তে পাঠায়। অধিকাংশের বাড়ি কুড়িগ্রামে। স্থানীয় সূত্র অনুযায়ী, তারা বহু বছর ধরে হরিয়ানায় বিভিন্ন পেশায় কাজ করতেন এবং এক সপ্তাহ আগে ভারতীয় পুলিশ তাদের বহরমপুরে জেলে পাঠিয়ে সীমান্তে পৌঁছে দেয়। মুজিবনগর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, পরিচয় যাচাই শেষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় জাবরহাট ইউনিয়নের চান্দুরিয়া সীমান্তের ৩৩৮-এর ৫-এস পিলার এলাকা দিয়ে বিএসএফ সাতজনকে বাংলাদেশে ঠেলে দেয়। তাদের আটক করে বিজিবি বিকেলে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আটকরা হলেন—মোহাম্মদ আলী, তার মেয়ে মৌসুমী ও ছেলে নুরনবী, প্রতিবেশী নুর নাহার, সফিকুল ইসলাম, তার মেয়ে সাহিদা ও ছেলে মনিরুল। সকলের বাড়ি কুড়িগ্রামে। পীরগঞ্জ থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, যাচাই-বাছাই শেষে তাদের পরিবারের জিম্মায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এইভাবে সীমান্তে একতরফা পুশ ইন কার্যক্রমের ফলে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। আন্তর্জাতিকভাবে এই ধরণের পদ্ধতি গ্রহণযোগ্য নয় বলেও মনে করছেন সীমান্ত বিশেষজ্ঞরা।