ট্রাম্পের বিশ্বব্যাপী শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তে আদালতের স্থগিতাদেশ
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এ বছরের এপ্রিল মাসে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর যে ব্যাপক শুল্ক আরোপের উদ্যোগ নিয়েছিলেন, তা স্থগিত করেছে দেশটির কোর্ট অব ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড। আদালতের এই রায়কে ট্রাম্প প্রশাসনের অর্থনৈতিক নীতির ওপর একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বৃহস্পতিবার (২৯ মে) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এ তথ্য জানিয়েছে।
আদালত রায়ে বলেছে, হোয়াইট হাউস যে “আন্তর্জাতিক জরুরি আইন” বা আইইইপিএ-এর (International Emergency Economic Powers Act, 1977) অজুহাতে শুল্ক আরোপ করেছিল, সেটি প্রেসিডেন্টকে একচেটিয়াভাবে প্রায় সব দেশের পণ্যে শুল্ক আরোপের অনুমতি দেয় না। বরং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংক্রান্ত চূড়ান্ত কর্তৃত্ব যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধান অনুযায়ী কংগ্রেসের হাতে।
মানহাটনের এই আদালত আরও জানায়, প্রেসিডেন্টের হাতে সীমিত কিছু ক্ষমতা থাকলেও কংগ্রেসের অনুমোদন ছাড়া এত বিস্তৃত শুল্ক আরোপ আইনসম্মত নয়। আদালত চীন, মেক্সিকো ও কানাডার ওপর ট্রাম্পের পৃথক শুল্ক আরোপকেও স্থগিত করেছে। ওই সময় হোয়াইট হাউস বলেছিল, মাদক ও অবৈধ অভিবাসন ঠেকানোই ছিল এই শুল্কের উদ্দেশ্য।
আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসন দ্রুতই আপিল করেছে। হোয়াইট হাউসের ডেপুটি প্রেস সেক্রেটারি কুশ দেশাই বলেন, “জাতীয় জরুরি অবস্থা কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নির্ধারণ করা অনির্বাচিত বিচারকদের কাজ নয়।” তিনি আরও বলেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প আমেরিকাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এবং সব নির্বাহী ক্ষমতা ব্যবহার করে দেশের সংকট মোকাবিলা ও গৌরব ফিরিয়ে আনতে কাজ করছেন।
এই মামলাটি করে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক সংস্থা ‘লিবার্টি জাস্টিস সেন্টার’, যারা পাঁচটি ছোট আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানের হয়ে আদালতে গিয়েছিল। এই প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব দেশ থেকে পণ্য আমদানি করে, সেসব দেশের ওপর ট্রাম্প প্রশাসন শুল্ক বসিয়েছিল। এই মামলাটিই ট্রাম্পের “লিবারেশন ডে ট্যারিফ” এর বিরুদ্ধে প্রথম বড় আইনি চ্যালেঞ্জ। এর বাইরে ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতির বিরুদ্ধে আরও ছয়টি মামলা চলছে, যেগুলোর পেছনে রয়েছে ১৩টি মার্কিন অঙ্গরাজ্য এবং বিভিন্ন ছোট ব্যবসায়ী সংগঠন।
সর্বশেষ রায়ে তিন বিচারকের একটি প্যানেল বলেন, আইইইপিএ-তে প্রেসিডেন্টকে সীমিত কিছু বাণিজ্যিক ব্যবস্থা নেওয়ার অনুমতি থাকলেও ট্রাম্পের আরোপিত বিশ্বব্যাপী এবং প্রতিশোধমূলক শুল্ক আদেশ আইনের পরিধি ছাড়িয়ে গেছে। তারা মন্তব্য করেন, এসব শুল্ক “ট্রাফিকিং ট্যারিফ” হিসেবে কার্যকর হয়নি, কারণ আদেশে উল্লিখিত হুমকির সঙ্গে এসব শুল্কের সামঞ্জস্য ছিল না।
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর নতুন শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন, যার প্রভাবে বিশ্ববাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। পরে হোয়াইট হাউস কিছু শর্ত শিথিল করে এবং বিভিন্ন দেশের সঙ্গে দর কষাকষি করে। তবুও আইনি চ্যালেঞ্জ এড়ানো যায়নি।