ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবি, দাম কমানোর উদ্যোগে সরকারের পরিকল্পনা
বিশ্ব টেলিযোগাযোগ ও তথ্য সংঘ দিবস উপলক্ষে শনিবার বিটিআরসি ভবনে আয়োজিত এক সেমিনারে ইন্টারনেটের মূল্য কমিয়ে তা জনগণের জন্য আরও সহজলভ্য করার আহ্বান জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তিনি জানান, ইতোমধ্যে ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী (আইএসপি) পর্যায়ে ২০ শতাংশ দাম কমানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে এ উদ্যোগ বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, আইআইজি ও এনটিটিএন পর্যায়েও ইন্টারনেটের দাম কমানো হয়েছে এবং আগামী দুই-এক মাসের মধ্যেই এর সুফল ভোক্তারা পাবেন। তবে দাম কমানোর পাশাপাশি ইন্টারনেটকে সাধারণ জনগণের ব্যবহারের উপযোগী করে তুলতে হবে। তিনি শিক্ষা খাতে ইন্টারনেটের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেলেও কৃষি ও স্বাস্থ্য খাতে তা এখনো প্রয়োজনের তুলনায় পিছিয়ে রয়েছে বলে মন্তব্য করেন।
আসিফ মাহমুদ দুর্যোগের সময় ইন্টারনেট সেবায় বিঘ্ন ঘটার বিষয়টিকে উল্লেখ করে বলেন, বন্যা ও ঝড় আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে হলেও, এ সময় টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা কীভাবে সচল রাখা যায়, তা নিয়ে ভাবতে হবে। ইন্টারনেটকে নাগরিক অধিকার হিসেবে বিবেচনা করে এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশের খসড়া প্রণয়ন করা হয়েছে, যা সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের সময় মোবাইল ইন্টারনেট ব্ল্যাকআউট করে জনগণকে নিপীড়নের শিকার করা হয়েছিল উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইন্টারনেটের অনুপস্থিতিতে কী ঘটেছে, তা জানতে অনেক দেরি হয়েছে। তাই ইন্টারনেটের মতো একটি মাধ্যমকে বন্ধ করে দেওয়া মানেই মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলা।
তিনি আরও বলেন, প্রযুক্তি খাতে দেশি উদ্ভাবকরা সুবিধার অভাবে দেশ ছাড়ছেন। থ্রি-জি, ফোর-জি, ফাইভ-জি প্রযুক্তিতে আমরা বিশ্বে অনেক পিছিয়ে পড়েছি। তরুণ প্রজন্মকে ইনোভেশনের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে এবং নারীদের সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি স্বীকার করেন, সাইবার স্পেসে নারীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এখনো সফল হওয়া যায়নি, তবে সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ আইনে নারীরা বেশি নিরাপদ হবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, আইসিটি খাতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে সরকার কাজ করছে। তিনি জানান, সাইবার সুরক্ষা আইন কয়েক সপ্তাহের মধ্যে পাস হবে এবং এতে নারীদের জন্য সুরক্ষা আরও জোরদার হবে। জাতীয় উদ্ভাবন চ্যালেঞ্জ ও সবুজ পাতা প্রকল্পেও নারী উদ্যোক্তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মাহবুবা ফারজানা, আইসিটি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী, ডাক ও টেলিযোগাযোগ সচিব জহিরুল ইসলাম এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান (অব.) মেজর জেনারেল এমদাদ উল বারী। সেমিনারের পর আয়োজিত উন্মুক্ত আলোচনায় ইন্টারনেটভিত্তিক বাজার ব্যবস্থাপনা নিয়ে আলোচনা হয়।