সালমান রুশদির ওপর হামলার ঘটনায় হাদি মাতারের ২৫ বছরের কারাদণ্ড
বিশ্বখ্যাত সাহিত্যিক সালমান রুশদিকে লক্ষ্য করে প্রাণঘাতী ছুরি হামলার দায়ে হাদি মাতার নামের ২৭ বছর বয়সী এক যুবককে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের একটি আদালত। শুক্রবার (১৭ মে) ঘোষিত এই রায়ে বলা হয়, অপরাধের ধরন অনুযায়ী এটিই সর্বোচ্চ সাজা।
২০২২ সালের আগস্টে নিউইয়র্কের চাওতাউকুয়া জেলায় একটি সাহিত্যিক অনুষ্ঠানে মঞ্চে বক্তব্য দেওয়ার সময় রুশদির ওপর হামলা চালান হাদি মাতার। হামলাকারী তখন মাত্র ২৪ বছর বয়সী ছিলেন। তিনি রুশদির ঘাড়, মাথা ও দেহে একাধিকবার—মোট ১৫ বার ছুরিকাঘাত করেন। এতে গুরুতর আহত হন রুশদি। এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নেওয়া হয় তাকে, যেখানে তাকে একাধিকবার সার্জারি করাতে হয় এবং একটি চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান।
আদালতে রুশদি বলেন, “সে প্রথমে আমাকে ঘুষি মেরেছিল, এরপর ছুরি দিয়ে একের পর এক আঘাত করে। এখনও আমি পুরোপুরি সেরে উঠিনি।” রুশদি উল্লেখ করেন, হামলার পর থেকে তিনি আগের মতো শারীরিক সক্ষমতা ফিরে পাননি।
অন্যদিকে আসামি হাদি মাতার আদালতে বলেন, “সালমান রুশদি অনেককে অসম্মান করেন, এবং মনে করেন সবাই তার মতো ভাববে। আমি এই চিন্তাধারার সঙ্গে একমত নই।”
রায়ের পরে মাতারের আইনজীবী নাথানিয়েল ব্যারন বলেন, “মানুষ কখনও কখনও ভুল সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলাফল ভয়াবহ হয়। সে অনুতপ্ত কি না, তা বলা কঠিন।”
সালমান রুশদি ১৯৪৭ সালে ভারতের মুম্বাইতে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে ‘মিডনাইটস চিলড্রেন’ উপন্যাসের মাধ্যমে বিশ্বজোড়া খ্যাতি অর্জন করেন এবং বুকার পুরস্কার লাভ করেন। কিন্তু ১৯৮৮ সালে প্রকাশিত ‘দ্য স্যাটানিক ভার্সেস’ বইটি তাকে কট্টরপন্থিদের রোষানলে ফেলে। বইটি অনেক দেশে নিষিদ্ধ হয় এবং ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খোমেনি তার বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডের ফতোয়া জারি করেন।
সুরক্ষা সত্ত্বেও রুশদি শেষ পর্যন্ত হামলার শিকার হন। বইটি প্রকাশের ৩৫ বছর পর হাদি মাতারের হাতে ঘটে যায় সেই ভয়াবহ ঘটনা, যার রায় এখন ২৫ বছরের সাজা হিসেবে নথিভুক্ত হলো।
সূত্র: রয়টার্স, আলজাজিরা