আন্তর্জাতিক বাজারে দাম কমলেও দেশে সয়াবিন তেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেশি
তিন বছরের মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম সবচেয়ে কম হলেও বাংলাদেশে এখনো এর দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। সয়াবিন তেল পরিশোধনকারী মিল মালিকেরা নানা অজুহাতে প্রতিলিটার তেলে ১২ টাকা পর্যন্ত লাভ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে, যা সংশ্লিষ্টদের মতে অস্বাভাবিক। ব্যবসায়ীদের দাবি, টাকার অবমূল্যায়ন এবং ব্যাংকিং সহায়তার সংকটের কারণে বিশ্ববাজারের দরপতনের সুফল মিলছে না দেশের সাধারণ ভোক্তাদের।
বিশ্বব্যাংকের মাসিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২২ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে কমছে সয়াবিন তেল, পাম অয়েল এবং সয়াবিন বীজের দাম। ২০২২ সালে প্রতি টন সয়াবিন তেলের গড় দাম ছিল ১,৬৬৭ ডলার, যা ২০২৩ সালে নেমে আসে ১,১১৯ ডলারে এবং ২০২৪ সালে হয় ১,০২২ ডলার। ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে গড় দাম দাঁড়িয়েছে ১,০৪০ ডলারে। একই ধারা দেখা গেছে পাম অয়েল ও সয়াবিন বীজের ক্ষেত্রেও, যেখানে সবচেয়ে বেশি দাম কমেছে সয়াবিন বীজের—২০২২ সালের ৬৭৫ ডলার থেকে ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে গড় দাম নেমে এসেছে ৪০৮ ডলারে।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য বলছে, গত ছয় মাসে বন্দরে আসা অপরিশোধিত ভোজ্যতেলের গড় শুল্কায়ন মূল্য ছিল ১৩৬ টাকা প্রতি কেজি। এর সঙ্গে পরিবহন, পরিশোধন, শুল্ক, কর এবং ভ্যাট যোগ করেও প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের উৎপাদন খরচ দাঁড়ায় সর্বোচ্চ ১৭৭ টাকা। কিন্তু সরকার এখন প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ করেছে ১৮৯ টাকা, যার ফলে ব্যবসায়ীদের প্রতি লিটারে গড়ে ১২ টাকা লাভ হচ্ছে।
২০২৪ সালে ভোজ্যতেলের দাম কয়েকবার ওঠানামা করেছে। জানুয়ারিতে ১২তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর আলোচনা ছাড়াই আমদানিকারকরা দাম বাড়ান, এরপর মার্চে কিছুটা কমলেও এপ্রিল ও ডিসেম্বর মাসে আবার বাড়ানো হয় দাম। সর্বশেষ ৩১ মার্চ শুল্ককর ছাড়ের মেয়াদ শেষ হলে এপ্রিলের শুরুতেই আরও ১৪ টাকা বাড়ানো হয় সয়াবিন তেলের দাম।
এদিকে বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, দেশে ভোজ্যতেলের চাহিদা বাড়লেও পরিশোধনকারী প্রতিষ্ঠান কমে যাওয়ায় এখন বাজার নিয়ন্ত্রণ করছে মাত্র পাঁচটি বড় শিল্প গ্রুপ—মেঘনা, সিটি, টিকে, বাংলাদেশ এডিবল অয়েল লিমিটেড এবং স্মাইল ফুড প্রোডাক্টস। ক্যাব-এর তথ্য অনুযায়ী, এই প্রতিষ্ঠানগুলোর হাতে আমদানিকৃত ভোজ্যতেলের ৭০ শতাংশের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
শিপিং এজেন্টদের তথ্যমতে, ২০২৫ সালের প্রথম তিন মাসে ২৩টি জাহাজে ৫ লাখ টনের বেশি অপরিশোধিত ভোজ্যতেল ও সয়াবিন বীজ দেশে এসেছে। এর মধ্যে ফেব্রুয়ারি ও মার্চে সবচেয়ে বেশি আমদানি করেছে টিকে গ্রুপ। ১৯ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত আমদানি বন্ধ থাকলেও দাম বাড়ার পূর্বাভাস পেয়ে ২ এপ্রিল থেকে আবার জাহাজ আসা শুরু করে।
তবে এই পরিস্থিতিতে সিটি গ্রুপের পরিচালক অমিতাভ চক্রবর্তী জানান, আন্তর্জাতিক বাজার ও উৎপাদন খরচ বিবেচনায় দেশীয় বাজারে দাম নির্ধারণ করা হয় এবং এখানে অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ নেই বলে দাবি করেন তিনি। তবুও বাস্তব চিত্র বলছে, ভোক্তারা এখনো আন্তর্জাতিক বাজারের দরপতনের সুফল পাচ্ছেন না।