কুয়েতে মসজিদের মূল অংশ বন্ধ, নামাজের সময় কমাতে ইমামদের নির্দেশ
কুয়েতের সকল মসজিদের জন্য নতুন নির্দেশনা জারি করেছে দেশটির ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশনায় মসজিদের ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের নামাজের সময় কমানো এবং মসজিদের মূল অংশ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্যে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সংবাদমাধ্যম গালফ নিউজ শনিবার (১৯ এপ্রিল) এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
### বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে কঠোর পদক্ষেপ
কুয়েতে গ্রীষ্মকালে বিদ্যুতের ব্যবহার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে যায়, যার ফলে বিদ্যুৎ, পানি ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় এই নির্দেশনা জারি করেছে। নতুন নিয়মে দেশের ছয়টি বিভাগের মসজিদগুলোতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নির্দেশনা অনুযায়ী, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের সময় মসজিদের মূল অংশ (অভ্যন্তরীণ প্রার্থনা কক্ষ) বন্ধ থাকবে। মুসল্লিদের মসজিদের বাইরের অংশে বা উন্মুক্ত স্থানে নামাজ আদায় করতে হবে। শুধুমাত্র জুমার নামাজের সময় মসজিদের মূল অংশ খোলা রাখা হবে। এছাড়া, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে মসজিদের অভ্যন্তরে এয়ার কন্ডিশনার (এসি) চালু থাকলে তা ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখতে হবে।
মসজিদের বাইরের অংশে যদি এসি থাকে, তবে তা ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে সেট করতে হবে। এছাড়া, বেশিরভাগ মসজিদে নারীদের জন্য নির্ধারিত নামাজের স্থান বন্ধ রাখা হবে। শুধুমাত্র ধর্মীয় কার্যক্রম বা বিশেষ প্রয়োজনের সময় এই অংশ খোলা যাবে।
### নামাজের সময় কমানোর নির্দেশ
ইমাম ও মুয়াজ্জিনদের জন্য জারি করা নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আজানের পর যত দ্রুত সম্ভব নামাজ শুরু করতে হবে। বিশেষ করে যোহর এবং আসর নামাজের ক্ষেত্রে এই নির্দেশ কঠোরভাবে পালন করতে হবে। এছাড়া, নামাজের সময় দীর্ঘ না করে সংক্ষিপ্ত করার জন্যও বলা হয়েছে।
এই নিয়মের পাশাপাশি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য মসজিদগুলোতে যোহর নামাজের ৩০ মিনিট পর থেকে আসর নামাজ শুরুর ১৫ মিনিট আগ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সংযোগ সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন রাখা হবে। এই সময়ে মসজিদগুলো ব্ল্যাকআউটের আওতায় থাকবে।
### নির্দেশনার পেছনের কারণ
কুয়েতে গ্রীষ্মকালে তীব্র তাপমাত্রার কারণে এয়ার কন্ডিশনারের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়ে যায়, যা বিদ্যুৎ গ্রিডের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে। দেশটির বিদ্যুৎ ও পানি মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নির্দেশনাগুলো জারির মাধ্যমে বিদ্যুৎ খরচ কমানো এবং জ্বালানি সাশ্রয়ে টেকসই সমাধান নিশ্চিত করা হবে। মসজিদগুলোতে বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করার এই উদ্যোগ দেশের সামগ্রিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপনার একটি অংশ।
### জনমানসে প্রভাব
কুয়েতে মসজিদগুলো ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের কেন্দ্রবিন্দু। এই নতুন নির্দেশনা মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের অভিজ্ঞতার ওপর কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে গ্রীষ্মের তীব্র গরমে মসজিদের বাইরের অংশে নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে। তবে, কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই পদক্ষেপ জাতীয় স্বার্থে এবং বিদ্যুৎ সংকট মোকাবিলার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়।
ইসলাম ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই নির্দেশনা পালনে মসজিদ কর্তৃপক্ষ ও মুসল্লিদের সহযোগিতা কামনা করা হচ্ছে। তারা আশা প্রকাশ করেছে যে, এই পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদ্যুৎ ব্যবহারে ভারসাম্য আনা সম্ভব হবে এবং গ্রীষ্মকালে বিদ্যুৎ সরবরাহের ধারাবাহিকতা নিশ্চিত করা যাবে।
সূত্র: গালফ নিউজ