চীনা পণ্যে সর্বোচ্চ ২৪৫% শুল্ক আরোপ করল যুক্তরাষ্ট্র, বাণিজ্যযুদ্ধ আরও তীব্রতর
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে চলমান বাণিজ্য উত্তেজনা যেন আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল। এবার চীন থেকে আমদানি করা কিছু নির্দিষ্ট পণ্যের ওপর সর্বোচ্চ ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। হোয়াইট হাউস এই সিদ্ধান্তের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছে।
নতুন এই শুল্ক আরোপ প্রাথমিকভাবে লক্ষ্য করেছে চীনা ইলেকট্রিক যানবাহন (ইভি) ও সিরিঞ্জ বা ইনজেকশন সিরিঞ্জের মতো পণ্যকে।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে চীন থেকে আসা কিছু পণ্যে আমদানি শুল্ক সর্বোচ্চ ২৪৫ শতাংশ পর্যন্ত গিয়ে দাঁড়াবে।
এর আগে হোয়াইট হাউসের নিজস্ব ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি তথ্যপত্রে বলা হয়েছিল, চীনা পণ্যের ওপর শুল্কের হার সর্বোচ্চ ১৪৫ শতাংশ হতে পারে। কিন্তু সর্বশেষ ঘোষণায় দেখা যাচ্ছে, তা বেড়ে ২৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে।
এই বিশাল হারে শুল্ক আরোপের পেছনে রয়েছে একাধিক ধাপের হিসাব:
- ট্রাম্প প্রশাসনের ঘোষিত ১২৫% প্রতিশোধমূলক শুল্ক,
- ফেন্টানিল ওষুধ সংশ্লিষ্ট ২০% অতিরিক্ত শুল্ক,
- এবং সেকশন ৩০১ আওতায় আরোপিত বাড়তি শুল্ক,
এই তিনটি একত্রে যুক্ত হয়ে ইলেকট্রিক গাড়ি ও সিরিঞ্জের মতো চীনা পণ্যে এখন কার্যকরভাবে প্রায় ২৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হচ্ছে।
হোয়াইট হাউসের একজন কর্মকর্তা জানান, সেকশন ৩০১-এর আওতায় ইভি ও সিরিঞ্জের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক বসানো হয়েছে। এরপর ফেন্টানিল সংক্রান্ত অতিরিক্ত শুল্ক এবং ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ মিলিয়ে শুল্কের হার এভাবে বেড়ে গেছে।
সেকশন ৩০১ মূলত এমন এক মার্কিন বাণিজ্য আইন, যার মাধ্যমে অন্য দেশের “অন্যায্য বাণিজ্য নীতির” বিরুদ্ধে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হিসেবে উচ্চ শুল্ক আরোপ করা হয়। এই ধারা অনুযায়ী ৭.৫% থেকে ১০০% পর্যন্ত শুল্ক আরোপের সুযোগ রয়েছে।
ট্রাম্প বললেন, “চীনের কোর্টেই এখন বল”
এই সিদ্ধান্তের পর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে বলেন, এখন চীনের পক্ষ থেকেই আলোচনায় এগিয়ে আসার সময়।
তার ভাষায়, “চীনের কোর্টেই এখন বল। তাদেরই আমাদের সঙ্গে চুক্তি করতে হবে। আমাদের কিছু দেওয়ার দরকার নেই।”
তিনি আরও বলেন, চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পার্থক্য কেবল আকারে, উদ্দেশ্যে নয়।
“চীন ঠিক অন্য দেশের মতোই, শুধু ওরা বড় এবং আমাদের যা আছে, সেটাই চায়,”—এমনটিই বলা হয়েছে ট্রাম্পের মুখপাত্র ক্যারোলিন লেভিটের পাঠ করা এক বিবৃতিতে।
জাপান প্রতিনিধিদলের সঙ্গে আলোচনায় বসছেন ট্রাম্প
এদিকে ট্রাম্প জানান, বুধবার হোয়াইট হাউসে জাপান থেকে একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধিদল আসছে। আলোচনায় থাকছে—
- নতুন শুল্কনীতি,
- জাপানের প্রতিরক্ষা সহযোগিতা,
- এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ন্যায্যতার বিষয়।
তিনি বলেন, “আমি নিজেই এই বৈঠকে উপস্থিত থাকব ট্রেজারি ও বাণিজ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে। আশা করছি, আলোচনায় এমন কিছু সিদ্ধান্ত আসবে যা জাপান ও যুক্তরাষ্ট্র—দুই দেশের জন্যই ইতিবাচক হবে।”
পরিপ্রেক্ষিত
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যিক উত্তেজনা নতুন নয়। তবে এই সর্বোচ্চ হারে শুল্ক আরোপ ইঙ্গিত দিচ্ছে যে, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের টানাপড়েন আরও জটিল হতে যাচ্ছে। এর ফলে বৈশ্বিক বাজারে চীন-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যের প্রভাব এবং বিকল্প রপ্তানির বাজারগুলোতে সুযোগ—দুটোই একসঙ্গে উঁকি দিচ্ছে।
সূত্র: হোয়াইট হাউস, আনাদোলু এজেন্সি