শনিবার, ৭ই জুন, ২০২৫| রাত ১২:১৮

পশ্চিমবঙ্গে একদিনে ২৪ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৭:৩৮ অপরাহ্ণ
পশ্চিমবঙ্গে একদিনে ২৪ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

পশ্চিমবঙ্গে একদিনে ২৪ বাংলাদেশি গ্রেপ্তার

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার সুন্দরবন উপকূলীয় এলাকা থেকে নারী ও শিশুসহ ২৪ জন বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চিলমারি বনাঞ্চলের একটি গ্রামে অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ভারতীয় কর্মকর্তারা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ১১ জন নারী, ৯ জন পুরুষ এবং ৪ জন শিশু রয়েছেন। বারুইপুরের পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালি জানিয়েছেন, “আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জানতে পেরেছিলাম যে, চিলমারি বনের একটি গ্রামে কিছু অবৈধ বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী লুকিয়ে রয়েছেন। এই তথ্যের ভিত্তিতে আমাদের পুলিশ দল সেখানে অভিযান চালায় এবং তাদের গ্রেপ্তার করে।”

তিনি আরও বলেন, “গ্রেপ্তারকৃত কারও কাছেই ভারতে প্রবেশের জন্য বৈধ কোনো নথি পাওয়া যায়নি। জিজ্ঞাসাবাদে তারা স্বীকার করেছেন যে, তারা উপকূলীয় পথ দিয়ে অবৈধভাবে ভারতীয় ভূখণ্ডে প্রবেশ করেছেন।” তবে তাদের কাছে বাংলাদেশি নাগরিক হিসেবে পরিচয় প্রমাণের কোনো নথিও পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত এই বাংলাদেশিদের বুধবার (১৬ এপ্রিল) দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা জেলার একটি আদালতে হাজির করা হবে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা জানান, তারা এখনো খতিয়ে দেখছেন এই ব্যক্তিদের ভারতে প্রবেশের পেছনে কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল কিনা। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কেউ কেউ জানিয়েছেন, তারা জীবিকার সন্ধানে ভারতে এসেছেন।

এই ঘটনায় আন্তর্জাতিক মানবপাচার চক্রের জড়িত থাকার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেননি তদন্তকারীরা। পুলিশ সুপার পলাশ চন্দ্র ঢালি বলেন, “আমরা বিষয়টি গভীরভাবে তদন্ত করছি। এই অনুপ্রবেশের পেছনে কোনো সংঘবদ্ধ চক্র কাজ করছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”

সুন্দরবনের উপকূলীয় এলাকা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত। এই অঞ্চলের জটিল ভৌগোলিক অবস্থান এবং নদীপথের কারণে এটি প্রায়ই অবৈধ অনুপ্রবেশের পথ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) এবং পুলিশ এই ধরনের অনুপ্রবেশ ঠেকাতে নিয়মিত অভিযান চালায়। তবে স্থানীয়রা জানান, সীমান্তের বিস্তৃত এলাকা এবং নজরদারির ঘাটতির কারণে এ ধরনের ঘটনা পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিদের মধ্যে শিশুদের উপস্থিতি বিষয়টিকে আরও স্পর্শকাতর করে তুলেছে। স্থানীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এই ব্যক্তিরা দীর্ঘদিন ধরে গ্রামে লুকিয়ে ছিলেন এবং স্থানীয়দের সঙ্গে মিশে জীবনযাপন করছিলেন। পুলিশ এখন তাদের পরিচয় এবং ভারতে প্রবেশের উদ্দেশ্য সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছে।

এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে অবৈধ অনুপ্রবেশ এবং মানবপাচারের বিষয়টিকে আবারও সামনে এনেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের ঘটনা কেবল আইনশৃঙ্খলার বিষয় নয়, এর পেছনে অর্থনৈতিক দারিদ্র্য এবং সীমান্ত নিরাপত্তার দুর্বলতাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। দুই দেশের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ ছাড়া এই সমস্যার সমাধান কঠিন বলে মনে করেন তারা।

গ্রেপ্তারকৃত বাংলাদেশিদের ভবিষ্যৎ এখন আদালতের রায়ের ওপর নির্ভর করছে। পুলিশ জানিয়েছে, তারা আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এই ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। এদিকে, স্থানীয়রা এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করলেও অনেকে মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির দিকে তাকাচ্ছেন।

সূত্র: আইএএনএস

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি