শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১২

হামাস ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৭:৩৭ অপরাহ্ণ
হামাস ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল

হামাস ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করল

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস ইসরায়েলের দেওয়া ছয় সপ্তাহের যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। ইসরায়েল এই চুক্তির অংশ হিসেবে হামাসকে অস্ত্র সমর্পণের শর্ত দিয়েছিল, যা গোষ্ঠীটির জন্য একটি ‘রেডলাইন’ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এই তথ্য জানিয়েছে।

যুদ্ধবিরতি আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বলেছেন, “ইসরায়েল হামাসকে অস্ত্র ফেলে দেওয়ার শর্ত দিয়েছে, কিন্তু তারা স্থায়ী যুদ্ধবিরতি বা গাজা থেকে তাদের সেনা প্রত্যাহারের কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি। এই কারণে হামাস ইসরায়েলের প্রস্তাব পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছে।”

ধারণা করা হচ্ছে, গত সপ্তাহে ইসরায়েল মধ্যস্থতাকারী দেশগুলোর মাধ্যমে এই নতুন প্রস্তাব পাঠিয়েছিল। ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েক দিন পর এই প্রস্তাবটি এসেছে। প্রস্তাব পাওয়ার পর হামাসের প্রধান আলোচক খলিল আল-হাইয়া মিসরের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

হামাসের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, “মিসরের মাধ্যমে ইসরায়েলের পাঠানো প্রস্তাবে আমাদের অস্ত্র সমর্পণের শর্ত দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তারা গাজায় স্থায়ীভাবে যুদ্ধ বন্ধ বা সেনা সরিয়ে নেওয়ার কোনো আশ্বাস দেয়নি। ফলে আমরা এই প্রস্তাব গ্রহণ করছি না।”

ইসরায়েল প্রথমবারের মতো যুদ্ধবিরতির শর্ত হিসেবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের দাবি তুলেছে, যা গোষ্ঠীটির জন্য অগ্রহণযোগ্য। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা গাজায় স্থায়ী শান্তি এবং ইসরায়েলি সেনা প্রত্যাহারের নিশ্চয়তা ছাড়া কোনো চুক্তিতে রাজি হবে না।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা অভিযোগ করেছেন, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে আলোচনায় সময়ক্ষেপণ করছে এবং গাজায় হামলা চালিয়ে তাদের বন্দি জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করছে। ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে গাজায় ইসরায়েলের ৫৯ জন জিম্মি রয়েছেন, যাদের মধ্যে ২৪ জন জীবিত আছেন।

এদিকে, হামাসের মুখপাত্র ওসামা হামদান মঙ্গলবার জানিয়েছেন, মার্কিন-ইসরায়েলি নাগরিক এডেন আলেক্সান্ডার নামে এক জিম্মি যে যোদ্ধাদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন, তাদের সঙ্গে হামাসের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। হামদান অভিযোগ করেন, “এডেন যেখানে ছিলেন, সেখানে ইসরায়েল সরাসরি বোমা হামলা চালিয়েছে। আমাদের ধারণা, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবে তাকে হত্যার চেষ্টা করছে, যাতে যুক্তরাষ্ট্র জিম্মি মুক্তির জন্য তাদের ওপর যে চাপ দিচ্ছে, তা কমে যায়।”

গাজায় চলমান সংঘাত ২০২৩ সালের অক্টোবরে শুরু হয়, যখন হামাস ইসরায়েলে অতর্কিত হামলা চালিয়ে ১,২০০ জনকে হত্যা এবং ২৪২ জনকে জিম্মি করে। এরপর থেকে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যাতে এখন পর্যন্ত ৫১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, এই হতাহতদের ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।

এর আগে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে একটি সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। কিন্তু জিম্মি মুক্তি এবং সেনা প্রত্যাহার নিয়ে মতানৈক্যের কারণে মার্চ মাস থেকে ইসরায়েল আবার গাজায় হামলা শুরু করে। বর্তমানে মিসর, কাতার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় যুদ্ধবিরতি আলোচনা চলছে, তবে হামাসের নিরস্ত্রীকরণের শর্ত এই আলোচনাকে জটিল করে তুলেছে।

ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা বলছেন, ইসরায়েলের প্রস্তাবে গাজার মানুষের দীর্ঘমেয়াদি নিরাপত্তা বা শান্তির কোনো নিশ্চয়তা নেই। তারা অভিযোগ করেন, ইসরায়েল কেবল সময় কেনার চেষ্টা করছে এবং তাদের সামরিক লক্ষ্য অর্জনের দিকে মনোযোগ দিয়েছে।

অন্যদিকে, ইসরায়েল দাবি করে, হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস না করা পর্যন্ত তারা গাজায় অভিযান চালিয়ে যাবে। তারা বলছে, জিম্মিদের মুক্তি এবং হামাসের নিরস্ত্রীকরণ তাদের প্রধান শর্ত।

মধ্যস্থতাকারী দেশগুলো এখনো উভয় পক্ষের মধ্যে একটি সমঝোতার চেষ্টা করছে। তবে হামাসের প্রত্যাখ্যানের পর আলোচনা আরও কঠিন হয়ে পড়েছে। গাজার মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এবং স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠায় এই আলোচনার ফলাফল এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিশ্ব সম্প্রদায় এই পরিস্থিতির দিকে নিবিড়ভাবে তাকিয়ে আছে।

সূত্র: বিবিসি

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি