শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৬:১২

রাজশাহীতে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি কর্মীর মৃত্যু

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ১৬, ২০২৫ ৭:২৩ অপরাহ্ণ
রাজশাহীতে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি কর্মীর মৃত্যু

রাজশাহীতে প্রতিপক্ষের হামলায় বিএনপি কর্মীর মৃত্যু

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী | ১৬ এপ্রিল ২০২৫

রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় প্রতিপক্ষের হামলায় গুরুতর আহত বিএনপি কর্মী মকবুল হোসেন (৩৮) মারা গেছেন। তিনি উপজেলার দেলুয়াবাড়ি ইউনিয়নের আমগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। বর্তমানে তাঁর মরদেহ হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে।

ঘটনার বিবরণে জানা গেছে, সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিকেলে নারীঘটিত একটি বিষয় নিয়ে মীমাংসার জন্য আমগ্রাম এলাকায় স্থানীয়রা বৈঠকে বসেন। বৈঠকের একপর্যায়ে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, যা পরে মারামারিতে রূপ নেয়। এই সংঘর্ষে মকবুল হোসেন গুরুতর আহত হন। স্থানীয়রা তাকে দ্রুত উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করেন। তবে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান।

মকবুলের স্বজনরা জানিয়েছেন, হামলার সময় তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লাগে, যা তাঁর মৃত্যুর কারণ হয়। তারা এই ঘটনার জন্য প্রতিপক্ষের গ্রুপকে দায়ী করেছেন এবং এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবি করেছেন। মকবুল দুর্গাপুর উপজেলা বিএনপির একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন এবং স্থানীয় রাজনীতিতে তাঁর পরিচিতি ছিল।

দুর্গাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দুরুল হুদা ঢাকা পোস্টকে বলেন, “মকবুল হোসেন মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এই ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। বর্তমানে এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে এবং আইনি প্রক্রিয়া শেষে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।”

ঘটনার পটভূমি

মকবুলের মৃত্যুর ঘটনা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নারীঘটিত বিষয়টি দীর্ঘদিন ধরে দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনার কারণ ছিল। মীমাংসার উদ্দেশ্যে বৈঠক বসলেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সংঘর্ষের সময় ধারালো অস্ত্র ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে, যা ঘটনাকে আরও মারাত্মক করে তুলেছে।

বিএনপির স্থানীয় নেতারা এই ঘটনাকে দুঃখজনক হিসেবে উল্লেখ করে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মকবুল একজন নিবেদিত কর্মী ছিলেন, এবং তাঁর মৃত্যু দলের জন্য বড় ক্ষতি। তবে এই ঘটনার সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো বিষয় জড়িত কি না, তা এখনো স্পষ্ট নয়। পুলিশ জানিয়েছে, তারা বিষয়টি তদন্ত করে প্রকৃত কারণ উদঘাটন করবে।

এলাকার পরিস্থিতি

মকবুলের মৃত্যুর পর আমগ্রামে কিছুটা উত্তেজনা থাকলেও পুলিশের তৎপরতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের ঘটনা এলাকার শান্তি ও সম্প্রীতির জন্য হুমকি। অনেকে মীমাংসার মাধ্যমে এই ধরনের দ্বন্দ্ব এড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।

মকবুলের পরিবার এখন শোকের মধ্যে রয়েছে। তাঁর স্বজনরা বলছেন, তিনি পরিবারের একজন গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন, এবং তাঁর অকাল মৃত্যু তাদের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। তারা এই ঘটনার জন্য দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

তদন্ত ও আইনি প্রক্রিয়া

পুলিশ জানিয়েছে, মকবুলের মৃত্যুর ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। তবে এখনো কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তদন্তে সংঘর্ষে জড়িত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হচ্ছে। স্থানীয়ভাবে এই ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন গুজব ছড়ালেও পুলিশ জনগণকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মকবুলের শরীরে গভীর ক্ষত ছিল, এবং অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ তাঁর মৃত্যুর প্রধান কারণ। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের পর মৃত্যুর বিষয়ে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যাবে।

সমাজ ও রাজনীতিতে প্রভাব

এই ঘটনা রাজশাহীর রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলতে পারে। বিএনপির কর্মীর মৃত্যু দলের সমর্থকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। স্থানীয় নেতারা বলছেন, এই ঘটনা তাদের সাংগঠনিক কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি করবে না, তবে তারা বিচারের জন্য আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন।

এলাকাবাসী এই ধরনের সংঘর্ষের পুনরাবৃত্তি রোধে স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মীমাংসার পরিবর্তে সংঘাতে জড়ানো কারও জন্যই মঙ্গলজনক নয়।

মকবুলের মৃত্যু দুর্গাপুরের আমগ্রামে শোকের ছায়া ফেলেছে। তাঁর পরিবার এবং সমর্থকরা এখন ন্যায়বিচারের অপেক্ষায়। আইনি প্রক্রিয়া এবং তদন্তের ফলাফল এই ঘটনার পরবর্তী দিক নির্ধারণ করবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি