পুতিনের শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত, তবুও ইউক্রেনে রুশ হামলা অব্যাহত
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে সরাসরি আলোচনার মাধ্যমে চলমান যুদ্ধ বন্ধের ইঙ্গিত দিয়েছেন। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম তিনি এমন ইঙ্গিত দিলেন। সোমবার (২১ এপ্রিল) রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত একটি টেলিভিশন চ্যানেলের সঙ্গে আলাপকালে পুতিন এই সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেন। তবে, এই শান্তি আলোচনার ইঙ্গিত সত্ত্বেও ইউক্রেনের বিভিন্ন শহরে রুশ বাহিনীর হামলা অব্যাহত রয়েছে।
পুতিন বলেন, “রাশিয়া সবসময় শান্তি উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনা করে। আমরা আশা করি, কিয়েভের কর্তৃপক্ষও এই বিষয়ে একই মনোভাব পোষণ করবে।” ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ এই মন্তব্যের ব্যাখ্যায় বলেছেন, পুতিনের বক্তব্যে ইউক্রেনের বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা বন্ধ এবং সরাসরি আলোচনায় বসার আগ্রহের ইঙ্গিত রয়েছে।
যদিও পুতিন শান্তি আলোচনার কথা বলেছেন, মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চলে রুশ বাহিনীর হামলার খবর পাওয়া গেছে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, জাপোরিঝিয়া শহরে একটি আবাসিক ভবনে রুশ হামলায় একজন নারী নিহত এবং চার শিশুসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছেন। এছাড়া, পূর্বাঞ্চলের খারকিভ শহরে রুশ হামলায় অন্তত সাতজন আহত হয়েছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার ওডেসা, স্যামি, দোনেস্ক এবং দক্ষিণাঞ্চলের অন্যান্য এলাকায়ও রুশ হামলা চালানো হয়েছে। ইউক্রেনের গণমাধ্যমের খবরে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের খেরসনেও হামলার তথ্য পাওয়া গেছে। এর আগে, সোমবার রাতে ওডেসার একটি পাঁচতলা ভবনে রুশ বাহিনীর হামলায় কমপক্ষে তিনজন আহত হয়েছেন।
জেলেনস্কি এই হামলাগুলোকে “ইচ্ছাকৃত রুশ সন্ত্রাস” হিসেবে অভিহিত করে বলেছেন, “একটি আদেশের মাধ্যমেই এই ধরনের হামলা বন্ধ করা সম্ভব।” তিনি রাশিয়ার কাছে ইউক্রেনের বেসামরিক অবকাঠামোতে দূরপাল্লার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা ৩০ দিনের জন্য বন্ধ করার প্রস্তাব দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, জেলেনস্কির এই প্রস্তাবের জবাবেই পুতিন সরাসরি আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রার সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে দুই দেশের মধ্যে সরাসরি কোনো আলোচনা হয়নি। এই যুদ্ধে ইতোমধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, এবং ইউক্রেনের অবকাঠামোতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। রাশিয়ার অধিকৃত ইউক্রেনের কিছু অঞ্চল এবং চলমান সংঘাত শান্তি আলোচনার পথে বড় বাধা হিসেবে রয়ে গেছে।
পুতিনের এই সাম্প্রতিক বক্তব্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে আশার সঞ্চার করলেও, ইউক্রেনে অব্যাহত হামলা শান্তি আলোচনার সম্ভাবনা নিয়ে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আলোচনার জন্য উভয় পক্ষের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং সুনির্দিষ্ট শর্ত প্রয়োজন, যা এখনও অনুপস্থিত।
ইউক্রেনের কর্তৃপক্ষ এখনও পুতিনের এই বক্তব্যের বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, জেলেনস্কি বারবার বলে আসছেন, শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য রাশিয়াকে অবশ্যই ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতার প্রতি সম্মান দেখাতে হবে।
এই মুহূর্তে বিশ্ব সম্প্রদায় এই যুদ্ধের গতিপ্রকৃতি এবং সম্ভাব্য শান্তি আলোচনার দিকে নিবিড়ভাবে নজর রাখছে। পুতিনের ইঙ্গিত বাস্তবে রূপ নেয় কি না এবং তা কীভাবে ইউক্রেনে শান্তি ফিরিয়ে আনতে পারে, তা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: বিবিসি