চারুকলার ক্যানভাসে ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি: প্রতিবাদের রঙে আঁকা বাস্তবতা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের সাম্প্রতিক প্রদর্শনীতে যে চিত্রটি বিশেষভাবে দর্শনার্থীদের দৃষ্টি কেড়েছে, সেটি হলো “ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি”। এটি শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং একটি সময়ের প্রতিচ্ছবি, একটি দর্শনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ, এবং একটি সমাজের নীরব যন্ত্রণার উচ্চারণ। এই চিত্রকর্মে তুলে ধরা হয়েছে আধুনিক পৃথিবীতে ফ্যাসিবাদ কিভাবে নতুন রূপে, নতুন মুখোশে ফিরে এসেছে—আর তা কিভাবে মানবজীবন, সংস্কৃতি, ও চিন্তার স্বাধীনতাকে বিপন্ন করছে।
চিত্রকর্মটির মুখ্য আকর্ষণ হলো এর শক্তিশালী ভিজ্যুয়াল উপস্থাপন। এখানে একটি বিকৃত মুখাবয়ব দেখা যায়, যার চোখ জ্বলছে আগ্রাসনে, ঠোঁটের কোণে বিদ্বেষের ছাপ, আর পটভূমিতে যুদ্ধ, দমন, নির্যাতন ও নিপীড়নের প্রতীকচিহ্ন। রঙের ব্যবহার একদিকে যেমন ঘন, তেমনি অস্পষ্ট—যেন দানবের আবছা মুখ দেখে শিহরিত হতে হয়। শিল্পী এই কাজের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, ফ্যাসিবাদ এখন আর শুধু ইতিহাসের কোনো অধ্যায় নয়; এটি আমাদের চারপাশে, সমাজে, রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও নতুনভাবে প্রবেশ করছে।
চারুকলার শিক্ষার্থীরা জানান, তারা এই চিত্রকর্মটি নির্মাণ করেছেন সমসাময়িক বৈশ্বিক ও স্থানীয় প্রেক্ষাপটকে সামনে রেখে। বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক দমন, বাক-স্বাধীনতার হরণ, সংখ্যালঘু নির্যাতন, এবং বিরোধীদের দমন-পীড়নের ঘটনাগুলো তাদের গভীরভাবে নাড়া দিয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছেন, ফ্যাসিবাদ এখন আর একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক মতাদর্শে সীমাবদ্ধ নয়; এটি একটি মানসিকতা, একটি পদ্ধতি, যা শক্তিকে সত্যের উপর বসাতে চায়।
এই চিত্রকর্মটি শুধু চারুকলার দেয়ালে শোভা পায়নি, বরং এটি আলোচনা, বিতর্ক ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাড়া ফেলেছে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাধারণ দর্শনার্থী সবার মধ্যেই এটি চিন্তার খোরাক জুগিয়েছে। অনেকেই এটিকে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সাহসী প্রতিচ্ছবি হিসেবে দেখছেন।
ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি শিরোনামের এই শিল্পকর্ম আমাদের মনে করিয়ে দেয়, শিল্প কখনো শুধু নান্দনিকতার জন্য নয়, বরং প্রতিবাদের ভাষাও হতে পারে। এটি সেই নীরব ভাষা, যা গর্জে ওঠে যখন সমাজ কথা বলতে ভয় পায়। চারুকলার এই প্রয়াস নতুন প্রজন্মের কাছে একটি বার্তা পৌঁছে দেয়—চোখ খুলে দেখতে হবে, প্রশ্ন করতে হবে, আর অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। শিল্প এখানেই জীবন্ত।