ইউক্রেনে রুশ হামলার পর যুদ্ধবিরতির জন্য কঠোর ব্যবস্থার দাবি ম্যাক্রোঁর
ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ রাশিয়াকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। ইউক্রেনের সুমি শহরে রোববার (১৩ এপ্রিল) রুশ বাহিনীর ভয়াবহ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় কমপক্ষে ৩৪ জন নিহত হওয়ার পর তিনি এই দাবি তুলেছেন। এই হামলায় শিশুসহ বহু বেসামরিক নাগরিক নিহত ও প্রায় ১০০ জন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউক্রেন।
ম্যাক্রোঁ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ এক বিবৃতিতে বলেন, “এই যুদ্ধ রাশিয়া শুরু করেছে, এটি সবাই জানে। আজও তারা মানবজীবনের প্রতি কোনো শ্রদ্ধা না দেখিয়ে, আন্তর্জাতিক আইন এবং প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কূটনৈতিক প্রচেষ্টাকে উপেক্ষা করে এই সংঘাত চালিয়ে যাচ্ছে।” তিনি আরও জোর দিয়ে বলেন, “রাশিয়াকে যুদ্ধবিরতিতে বাধ্য করতে এখন কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।”
ফরাসি বার্তা সংস্থা এএফপির প্রতিবেদনে বলা হয়, রোববার সকালে ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সীমান্তবর্তী সুমি শহরের কেন্দ্রে রাশিয়া দুটি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। এতে শহরের বেসামরিক অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কিয়েভের দাবি, নিহতদের মধ্যে শিশুরাও রয়েছে, যা এই হামলার নৃশংসতাকে আরও স্পষ্ট করে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে পূর্ণমাত্রায় সামরিক অভিযান শুরু করার পর থেকে এই যুদ্ধে হাজার হাজার বেসামরিক নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। রুশ বাহিনী ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন এবং জাপোরিঝিয়া প্রদেশের কিছু অংশ দখল করেছে, যা দেশটির মোট ভূখণ্ডের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। পশ্চিমা গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অনুমান, এই যুদ্ধে উভয় পক্ষের হতাহতের সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়েছে, যদিও রাশিয়া ও ইউক্রেন কেউই তাদের ক্ষয়ক্ষতির সঠিক তথ্য প্রকাশ করেনি।
যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞাসহ বিভিন্ন চাপ সৃষ্টি করেছে। তবে এই চাপ সত্ত্বেও রাশিয়া তার সামরিক অভিযান অব্যাহত রেখেছে। গত জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প রাশিয়া ও ইউক্রেনকে আলোচনার টেবিলে আনার চেষ্টা করছেন। কিন্তু এই প্রচেষ্টা এখনো কোনো উল্লেখযোগ্য ফলাফল আনতে পারেনি।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বারবার বলে আসছেন, রাশিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের প্রতিরোধ অব্যাহত থাকবে। তিনি পশ্চিমা দেশগুলোর কাছে আরও সামরিক ও আর্থিক সহায়তা চেয়েছেন। অন্যদিকে, রাশিয়া দাবি করছে, তারা ইউক্রেনের কিছু অংশে ‘বিশেষ সামরিক অভিযান’ চালাচ্ছে এবং এটি তাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
সুমির হামলা এই যুদ্ধের আরেকটি মর্মান্তিক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ম্যাক্রোঁর আহ্বানের পর অনেকে প্রশ্ন তুলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কীভাবে এই সংকটে আরও কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। ইউক্রেনের জনগণ এখন শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য বিশ্বের দৃঢ় সমর্থন কামনা করছে।
সূত্র: এএফপি