প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের আলবেনিয়ায় পাঠাচ্ছে ইতালি
ইতালি শিগগিরই আলবেনিয়ার গজাদারে নির্মিত একটি কেন্দ্রে ৪০ জন প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীকে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ভূমধ্যসাগর থেকে উদ্ধার করা অভিবাসীদের আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য ইতালি আলবেনিয়ার শেনজিন ও গজাদারে দুটি কেন্দ্র তৈরি করেছিল। এখন এই কেন্দ্রগুলোকে সেন্টার্স অব পার্মানেন্স অ্যান্ড রিপ্যাট্রিয়েশন (সিপিআর) বা অভিবাসী প্রত্যাবাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহারের জন্য নতুন ডিক্রি জারি করেছে দেশটি।
২০২৩ সালের নভেম্বরে ইতালি ও আলবেনিয়ার মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যার অধীনে এই কেন্দ্রগুলোতে বছরে ৩৬,০০০ অনিয়মিত অভিবাসী ও আশ্রয়প্রার্থীকে রাখার পরিকল্পনা ছিল। চুক্তি অনুযায়ী, আলবেনিয়ায় তাদের আশ্রয় আবেদন যাচাই-বাছাই করা হতো। তবে, এর আগে তিন দফায় অভিবাসীদের আলবেনিয়ায় পাঠানো হলেও ইতালির আদালতের রায়ের কারণে তাদের ফিরিয়ে আনতে হয়। এই কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব কিনা, তা এখন ইউরোপীয় বিচার আদালতের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছে।
ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনির নেতৃত্বাধীন অতি-ডানপন্থি সরকার এই চুক্তিকে তাদের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা হিসেবে বিবেচনা করে। আদালতের বাধার মুখে আশ্রয় প্রক্রিয়াকরণ সম্ভব না হওয়ায় গত ২৮ মার্চ নতুন ডিক্রি জারি করা হয়। এই ডিক্রি অনুযায়ী, কেন্দ্র দুটি এখন প্রত্যাবাসন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হবে। যাদের আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যান হয়েছে, আপিলের সুযোগ শেষ হয়েছে এবং ইতালি ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে এই কেন্দ্রগুলোতে রাখা হবে। ইতালির আদালত এই ধরনের প্রত্যাবাসন কেন্দ্রে অভিবাসীদের রাখার অনুমতি দিয়েছে।
ইতালির সরকার আশা করছে, এবার বিচারকদের হস্তক্ষেপ ছাড়াই আলবেনিয়ার কেন্দ্রগুলোতে অভিবাসী পাঠানো সম্ভব হবে। বর্তমানে গজাদারের কেন্দ্রটি ৪০ জন অভিবাসী রাখার জন্য প্রস্তুত, তবে সরকার এই সংখ্যা ১৪৪-এ উন্নীত করার পরিকল্পনা করছে। ইতালির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাত্তেও পিয়ান্তেদোসি জানিয়েছেন, দক্ষিণাঞ্চলীয় পুগলিয়া বন্দর থেকে সমুদ্রপথে অভিবাসীদের গজাদারে নিয়ে যাওয়া হবে।
ইতালিতে প্রত্যাবাসন কেন্দ্রের সংখ্যা সীমিত হওয়ায় প্রত্যাখ্যাত অভিবাসীদের রাখা এবং তাদের নির্বাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠেছে। ইতালির আইন অনুসারে, অভিবাসীদের সর্বোচ্চ ১৮ মাস এই ধরনের কেন্দ্রে আটক রাখা যায়। তবে, আলবেনিয়ার কেন্দ্রগুলোর ক্ষেত্রে এই সময়সীমা প্রযোজ্য হবে কিনা, তা এখনো স্পষ্ট নয়। সরকারের মতে, দেশে পর্যাপ্ত প্রত্যাবাসন কেন্দ্র না থাকায় অনেক প্রত্যাখ্যাত অভিবাসী পালিয়ে যাচ্ছেন বা নিখোঁজ হচ্ছেন। আলবেনিয়ার নতুন কেন্দ্রগুলো এই সমস্যা সমাধানে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এর আগে, প্রত্যাখ্যাত অভিবাসীদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকাতে ইতালির প্রতিটি অঞ্চলে একটি করে নতুন প্রত্যাবাসন কেন্দ্র তৈরির প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আঞ্চলিক সরকারগুলো এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।
অভিবাসী নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। ইতালির সঙ্গে সব দেশের প্রত্যাবাসন চুক্তি না থাকায় সবাইকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হয় না। উদাহরণস্বরূপ, টিউনিশিয়ার মতো দেশগুলোর সঙ্গে ইতালির কার্যকর চুক্তি থাকায় সেখানকার অভিবাসীদের ফেরত পাঠানো তুলনামূলক সহজ। তবে, অন্যান্য দেশের ক্ষেত্রে জটিল আলোচনার প্রয়োজন হয়।
ইতালির বিরোধী দলগুলো সরকারের এই উদ্যোগের সমালোচনা করে আসছে। তারা অভিবাসী নির্বাচনের মানদণ্ড, প্রত্যাবাসন পদ্ধতি এবং আটকের পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। এই বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণের জন্য একটি সংসদীয় প্রতিনিধি দল আলবেনিয়া সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
ইতালির অ্যাসোসিয়েশন ফর লিগ্যাল স্টাডিজ অন ইমিগ্রেশন (এএসজিআই) সরকারের এই পদক্ষেপকে তীব্রভাবে নিন্দা করেছে। তারা বলেছে, জাতীয় সীমানার বাইরে জোরপূর্বক স্থানান্তর বিচার ব্যবস্থায় গুরুতর ত্রুটি সৃষ্টি করছে। এই সমালোচনা সত্ত্বেও, ইতালির সরকার তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
সূত্র: ইনফোমাইগ্রেন্টস