প্রতারণা করে রাশিয়ার সেনাবাহিনীতে নেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশিদের
রাশিয়ায় কাজের প্রলোভনে বাংলাদেশি যুবকদের প্রতারণার মাধ্যমে রুশ সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি ২২ বছর বয়সী মোহাম্মদ ইয়াসিন শেখ নামে এক বাংলাদেশি যুবকের মৃত্যুর পর এই ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। এরপর থেকে মস্কোতে বাংলাদেশ দূতাবাসে উদ্বিগ্ন পরিবারগুলোর ফোন আসছে, তারা জানতে চাইছেন তাদের সন্তানদেরও কি যুদ্ধের ময়দানে পাঠানো হয়েছে?
শুক্রবার (১১ এপ্রিল) বার্তাসংস্থা এএফপি’র এক প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরির নামে বাংলাদেশি যুবকদের প্রতারণার জালে ফেলে রাশিয়ায় পাচার করা হচ্ছে। মোহাম্মদ আকরাম হোসেন নামে এক যুবক এএফপি’কে জানিয়েছেন, তিনি ও তার ভগ্নিপতি একটি রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে সাইপ্রাসে চাকরির প্রতিশ্রুতি পেয়েছিলেন। কিন্তু পরে এজেন্সি তাদের জানায়, চাকরি শুধু রাশিয়ায় পাওয়া যাবে। আকরাম বলেন, “আমরা রাজি হয়ে যাই, কিন্তু কল্পনাও করিনি যে আমাদের যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো হবে।”
আকরাম আরও জানান, ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে ১০ জনের একটি দলের সঙ্গে ওমরাহ ভিসায় তারা সৌদি আরব যান। কয়েক সপ্তাহ পর তাদের রাশিয়ায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে তাদের রুশ ভাষায় একটি চুক্তিপত্রে সই করতে বাধ্য করা হয়, যা তারা বুঝতেও পারেননি। এরপর তাদের সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে একটি সামরিক ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কয়েকজনকে সামরিক পোশাক পরিয়ে যুদ্ধে পাঠানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়। তবে আকরাম সেনেগালের একটি দলের সঙ্গে কৌশলে পালিয়ে দেশে ফিরতে সক্ষম হন। কিন্তু তার ভগ্নিপতি পালাতে পারেননি এবং এখন রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য হচ্ছেন।
আকরাম দেশে ফিরে সরকারকে এই মানবপাচারের বিষয়ে সতর্ক করেছেন। ঢাকার পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) এসপি মুস্তাফিজুর রহমান জানান, এই অভিযোগে এক নারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং ছয়টি মামলা দায়ের হয়েছে। পাচারকারীদের ধরতে তদন্ত চলছে।
ইয়াসিনের মৃত্যু গত ২৭ মার্চ রুশ সেনাবাহিনীর হয়ে যুদ্ধের সময় মিসাইল হামলায় ঘটে। তার চাচা আবুল হাশিম বলেন, “ইয়াসিনের এক বন্ধু, যে রুশ সেনাবাহিনীতে রয়েছে, ঈদের সময় ফোন করে তার মৃত্যুর খবর জানায়। পরে এক রুশ কমান্ডারও ফোন করেন।” তিনি জানান, গত বছর সেপ্টেম্বরে এক দালালকে টাকা দিয়ে ইয়াসিনকে রাশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল। দালাল বলেছিল, তাকে একটি চীনা কোম্পানিতে ইলেকট্রিশিয়ানের কাজ দেওয়া হবে। কিন্তু ডিসেম্বরে তাকে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়। আবুল হাশিম বলেন, “আমরা অনেক টাকা খরচ করেছি। এখন তার মরদেহ চাই, যেন তার মা শেষ বিদায় জানাতে পারেন।”
মস্কোতে বাংলাদেশের চার্জ ডি অ্যাফেয়ার্স ফরহাদ হোসেন জানান, কয়েক ডজন পরিবার তাদের সন্তানদের খোঁজে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। তিনি নিশ্চিত করেছেন, কিছু বাংলাদেশি রুশ সেনাবাহিনীতে যুদ্ধ করছে, তবে সংখ্যাটি তারা জানেন না। রুশ কর্তৃপক্ষের দাবি, এই যুবকরা চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে এবং তাদের বেতন দেওয়া হচ্ছে।