অন্তর্বর্তী সরকারের পাশে আছি, সাহায্য করে যাচ্ছি: পার্থ
বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি) এর চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থ বলেছেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার জনগণের গণঅভ্যুত্থানের ফসল। এটি কোনো ভোটে নির্বাচিত সরকার না হলেও, এটি জনগণের সরকার। তিনি জোর দিয়ে বলেন, এই সরকার যেন ব্যর্থ না হয়, সেজন্য তারা সরকারের পাশে দাঁড়িয়েছেন এবং সহযোগিতা করে যাচ্ছেন।
শনিবার (৫ এপ্রিল) বিকেলে ভোলা জেলা শহরের উকিল পাড়ায় অবস্থিত ‘শান্ত নীড়’-এ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পার্থ এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, “এই সরকার একটি বিপ্লবের সরকার। আমরা সবাই চাই এটি সফল হোক। আমরা শুরু থেকেই বলে আসছি, দেশে সংস্কার দরকার। তবে বড় ধরনের সংস্কার জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে হওয়া উচিত। সেই লক্ষ্যে আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে সাহায্য করছি।”
নির্বাচনের সময়সীমা নিয়ে তিনি বলেন, “প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বারবার বলেছেন, আমরা জনগণের কথা শুনছি। নির্বাচন ডিসেম্বরে হতে পারে, অথবা বড় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য হলে ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে হবে। আমি বিশ্বাস করতে চাই, ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হয়ে যাবে। আর যেসব সংস্কার এখনো বাকি থাকবে, সেগুলো ভবিষ্যতের জনগণের সরকারই করবে।” পার্থের এই বক্তব্যে সরকারের প্রতি তার আস্থা এবং নির্বাচন নিয়ে আশাবাদ ফুটে উঠেছে।
বিজেপির বর্তমান অবস্থান নিয়ে তিনি বলেন, “আমরা দল গুছিয়ে নিচ্ছি। বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা প্রাসঙ্গিক রাজনীতির মধ্যে আছি। ঈদের পর থেকে আমাদের কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। ঢাকার আসনগুলোসহ অন্যান্য এলাকায় জুন থেকে আমরা আসনভিত্তিক আলোচনায় যাব।” তিনি দলের সাংগঠনিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলেন, বিজেপি এখন নতুন উদ্যমে এগিয়ে যাচ্ছে।
৩০০ আসনে বিজেপি এককভাবে নির্বাচনে লড়বে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে পার্থ বলেন, “এখনো চূড়ান্ত কিছু ঠিক হয়নি। সংস্কারগুলো নির্বাচনকে কীভাবে প্রভাবিত করবে, তা এখনো পরিষ্কার নয়। সরকার কী ধরনের সংস্কার করবে, তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে। আগামী নির্বাচন কেমন হবে, কারা প্রার্থী হতে পারবে, কী ধরনের ঐক্য গড়ে উঠতে পারে—এসব বোঝার জন্য আমাদের আরেকটু সময় দরকার।” তিনি স্পষ্ট করেন, সংস্কারের ধরনই নির্ধারণ করবে ভবিষ্যতের রাজনৈতিক দৃশ্যপট।
পার্থের বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থনের পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ইঙ্গিত মিলেছে। তিনি বলেন, “এই সরকার জনগণের আকাঙ্ক্ষা থেকে জন্ম নিয়েছে। আমরা চাই, এটি সফল হয়ে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেয়।” তিনি সংযোজন করেন, “আমরা শুধু সমালোচনার জন্য সমালোচনা করছি না। আমরা সরকারকে সঠিক পথে রাখতে সহযোগিতা করছি।”
ভোলায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় পার্থের কণ্ঠে আশা ও দায়িত্ববোধের মিশ্রণ ছিল। তিনি বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ। আমরা তাদের পাশে থাকব, যাতে তারা জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারে।” তিনি জোর দিয়ে বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুদ্ধারই তাদের মূল লক্ষ্য।
বিজেপির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে তিনি বলেন, “ঈদের পর আমরা পুরোদমে কাজ শুরু করব। আসনভিত্তিক প্রস্তুতি নিয়ে এগোব। আমরা চাই জনগণের কাছে আমাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে।” তবে তিনি সতর্কতার সঙ্গে বলেন, “নির্বাচনে একা লড়ব না জোটে যাব, তা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে।”
পার্থের এই বক্তব্যে একদিকে সরকারের প্রতি সমর্থন, অন্যদিকে দলীয় শক্তি বৃদ্ধির পরিকল্পনা ফুটে উঠেছে। তিনি বলেন, “আমরা অপেক্ষা করছি সংস্কারগুলো কী হয়। তারপরই আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঠিক হবে।” এই মুহূর্তে তিনি সময়ের দাবি মেনে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়েছেন।