শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২৩

ইরানে হামলায় পিছু হটে আলোচনার প্রস্তাব ট্রাম্পের

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৬, ২০২৫ ৩:৫৭ অপরাহ্ণ
ইরানে হামলায় পিছু হটে আলোচনার প্রস্তাব ট্রাম্পের

ইরানে হামলায় পিছু হটে আলোচনার প্রস্তাব ট্রাম্পের

ইরানের বিরুদ্ধে বোমা হামলার হুমকি দিয়ে শেষ পর্যন্ত পিছু হটেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে দীর্ঘদিনের উত্তেজনার মধ্যে এবার তিনি তেহরানের সঙ্গে সরাসরি আলোচনার প্রস্তাব দিয়েছেন। এই অবস্থান পরিবর্তন যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের সম্পর্কে নতুন মোড় আনতে পারে।

বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই পিছু হটার পেছনে ইরানের কঠোর প্রতিক্রিয়া ও পাল্টা হুমকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বৃহস্পতিবার (৩ এপ্রিল) হোয়াইট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় ট্রাম্প বলেন, “ইরান এতদিন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে কথা বলে এসেছে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, তারা সরাসরি আলোচনায় আগ্রহী হতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, সরাসরি সংলাপই সবচেয়ে ভালো সমাধান দিতে পারে।” তার এই বক্তব্যে আগ্রাসী অবস্থান থেকে কিছুটা নরম হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যায়।

এর আগে গত মাসে ট্রাম্প ইরানকে পারমাণবিক ইস্যুতে আলোচনার জন্য চিঠি পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু তেহরান সেই প্রস্তাব সরাসরি নাকচ করে দেয়। এরপরই ট্রাম্প কঠোর ভাষায় বলেছিলেন, “ইরান যদি নতুন চুক্তিতে না আসে, তাহলে আমরা বোমা ফেলব।” এই হুমকির পর ইরান পিছপা না হয়ে আরও শক্ত অবস্থান নেয়। দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি বলেন, “মার্কিন হুমকির কাছে আমরা কখনো মাথা নত করব না। হামলা হলে কঠোর জবাব দেওয়া হবে।” ইরানের এই দৃঢ়তা ট্রাম্পকে তার অবস্থান পুনর্বিবেচনায় বাধ্য করেছে।

ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি জানিয়েছেন, তেহরান সরাসরি আলোচনার চেয়ে কূটনৈতিক বার্তা বিনিময়ের মাধ্যমে সমাধান চায়। তিনি বলেন, “আমরা যুদ্ধ চাই না, তবে চাপের কাছেও নতি স্বীকার করব না।” ইরানের এই অবস্থানে দৃঢ়তা ও সংযমের মিশ্রণ রয়েছে।

ইরান ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে পারমাণবিক ইস্যু নিয়ে বছরের পর বছর ধরে উত্তেজনা চলছে। ২০১৫ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার নেতৃত্বে একটি ঐতিহাসিক পারমাণবিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ট্রাম্প একপাক্ষিকভাবে সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে যান। এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে ফাটল আরও গভীর হয়েছে। ইরানের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, আর ইরানও তার পারমাণবিক কর্মসূচি ত্বরান্বিত করে।

দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় ফিরে ট্রাম্প ইরানের ওপর চাপ বাড়াতে নতুন চুক্তির প্রস্তাব দিয়ে আসছেন। তিনি বলেন, “আমি চাই ইরানের সঙ্গে একটি ভালো চুক্তি হোক। এটা তাদের জন্যও ভালো, আমাদের জন্যও ভালো।” তবে এবার তার সুরে আগের চেয়ে নমনীয়তা দেখা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ইরানের কঠোর অবস্থান এবং আন্তর্জাতিক চাপ ট্রাম্পকে হামলার পরিকল্পনা থেকে সরিয়ে এনেছে।

ইরানের সর্বোচ্চ নেতা খামেনি যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতির কথা বললেও শান্তির পথ খোলা রেখেছেন। তিনি বলেন, “আমরা আত্মরক্ষার জন্য তৈরি, কিন্তু যুদ্ধ শুরু করতে চাই না।” এই বক্তব্যে ইরানের দ্বৈত নীতি প্রকাশ পেয়েছে—একদিকে শক্তি প্রদর্শন, অন্যদিকে কূটনীতির সম্ভাবনা।

ট্রাম্পের নতুন প্রস্তাবে তিনি বলেন, “আমি তেহরানের সঙ্গে বসতে চাই। মধ্যস্থতাকারী ছাড়া সরাসরি কথা হলে সমাধান দ্রুত আসবে।” তবে ইরান এখনো সরাসরি সংলাপে রাজি হয়নি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরাঘচি বলেন, “আমরা কূটনৈতিক চ্যানেলের মাধ্যমে এগোতে চাই। সরাসরি আলোচনার জন্য এখনো সময় হয়নি।”

এই পরিস্থিতিতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজর ওয়াশিংটন ও তেহরানের দিকে। একজন বিশ্লেষক বলেন, “ট্রাম্প বুঝতে পেরেছেন, হামলা করলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে। তাই তিনি আলোচনার পথ বেছে নিয়েছেন।” ইরানও চাপের মুখে থাকলেও পিছু হটতে নারাজ।

দুই দেশের এই টানাপোড়েনে মধ্যপ্রাচ্যের শান্তি ঝুঁকির মুখে। ট্রাম্পের প্রস্তাব কতটা কার্যকর হবে, তা নির্ভর করছে ইরানের প্রতিক্রিয়ার ওপর।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি