বিতর্কিত ওয়াক্ফ বিলের প্রতিবাদে উত্তাল ভারত
ভারতের লোকসভায় বিতর্কিত মুসলিম ওয়াক্ফ সংশোধনী বিল পাস হওয়ার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। শুক্রবার, ৪ এপ্রিল, কলকাতা, চেন্নাই এবং আহমেদাবাদসহ বিভিন্ন শহরের রাস্তায় হাজার হাজার মানুষ বিক্ষোভে নেমেছেন। এই বিলের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফুঁসছে ভারতের মুসলিম সম্প্রদায়, আর তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সাধারণ মানুষ।
দুপুরে জুম্মার নামাজের পর থেকেই কলকাতার রাস্তা উত্তাল হয়ে ওঠে। হাতে জাতীয় পতাকা আর প্ল্যাকার্ড নিয়ে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান তুলেছেন—‘আমরা ওয়াক্ফ সংশোধনী মানছি না’, ‘ওয়াক্ফ বিল প্রত্যাহার করুন’। হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কলকাতায় প্রতিবাদের বহর ছিল বিশাল। মানুষের ঢল নেমেছে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে, আর তাদের কণ্ঠে ছিল একটাই দাবি—এই বিল বাতিল করতে হবে।
গুজরাটের আহমেদাবাদেও একই চিত্র। সেখানে ইসলাম ধর্মাবলম্বীরা রাস্তায় নেমে বিলের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু পরিস্থিতি তখনই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে, যখন পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হয়। প্রবীণরা যখন রাস্তায় বসে প্রতিবাদ জানান, গুজরাট পুলিশ তাদের জোর করে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। এই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, আরও ক্ষোভের জন্ম দেয়।
চেন্নাইয়ে বিক্ষোভের নেতৃত্বে ছিলেন অভিনেতা বিজয়ের রাজনৈতিক দল তামিলাঙ্গ ভেত্তরি কাঝাগাম (টিভিকে)। তারা রাজ্যব্যাপী প্রতিবাদের ডাক দিয়েছিল। চেন্নাইয়ের পাশাপাশি তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর, তিরুচিরাপল্লির মতো শহরেও বিপুল জনসমাগম হয়। বিক্ষোভকারীরা একসঙ্গে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘ওয়াক্ফ বিল প্রত্যাহার করুন’, ‘মুসলমানদের অধিকার কেড়ে নেবেন না’। রাস্তায় তাদের উপস্থিতি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি তীব্র বার্তা দিয়েছে।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিলের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন, “বাংলার মুসলমানদের অধিকার ক্ষুণ্ন হতে দেব না।” তৃণমূল কংগ্রেসের এই অবস্থান বিক্ষোভকারীদের আরও উৎসাহ দিয়েছে। জাতীয় পর্যায়ে কংগ্রেসও এই বিলের তীব্র বিরোধিতা করেছে। তারা বিজেপির বিরুদ্ধে বিভাজনের রাজনীতি করার অভিযোগ তুলে বলেছে, “এই বিল মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকারের ওপর আঘাত।”
লোকসভায় পাসের পর বৃহস্পতিবার রাতে রাজ্যসভায়ও এই বিল পাস হয়েছে। দীর্ঘ বিতর্কের পর ১২৮-৯৫ ভোটে এটি পার্লামেন্টের শেষ ধাপ পেরিয়েছে। কিন্তু এই সংখ্যাগরিষ্ঠতা সত্ত্বেও জনগণের প্রতিবাদ থামেনি। বিলে ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্য রাখার বাধ্যবাধকতা এবং সম্পত্তি দানে নতুন শর্তের মতো বিষয়গুলো বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে।
কলকাতার এক বিক্ষোভকারী বলেন, “এই বিল আমাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ। আমরা এটা মেনে নেব না।” আহমেদাবাদে একজন প্রবীণ বলেন, “পুলিশ আমাদের তুলে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু আমাদের কণ্ঠস্বর থামাতে পারবে না।” চেন্নাইয়ে টিভিকে কর্মীরা জানান, “এটা কেবল মুসলমানদের নয়, সবার অধিকারের লড়াই।”
প্রতিবাদের এই ঝড় কলকাতা থেকে চেন্নাই, আহমেদাবাদ থেকে তামিলনাড়ুর ছোট শহর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। পুলিশের কঠোরতা সত্ত্বেও বিক্ষোভকারীরা পিছু হটছেন না। মমতা ও কংগ্রেসের সমর্থন এই আন্দোলনকে আরও শক্তি দিয়েছে। এই বিল এখন আইনে পরিণত হলেও, জনগণের ক্ষোভ কীভাবে মোকাবিলা করা হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে গেছে।