সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ও হামায় দফায় দফায় হামলা ইসরায়েলের
সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক এবং মধ্যাঞ্চলীয় হামা প্রদেশে দফায় দফায় আক্রমণ চালিয়েছে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী। লক্ষ্যবস্তু ছিল দামেস্কের একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের আশপাশের এলাকা এবং হামার বিমানবন্দরসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বৃহস্পতিবার, ৩ এপ্রিল, সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়েছে।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার রাতে ইসরায়েলি যুদ্ধবিমান থেকে এই হামলা শুরু হয়। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা সানা জানিয়েছে, দামেস্কের বারজেহ এলাকায় অবস্থিত বৈজ্ঞানিক গবেষণা কেন্দ্রের চারপাশে এবং হামা শহরের বিমানবন্দরে আঘাত হানা হয়েছে। বার্তাসংস্থা আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাতে মোট ১১টি বিমান হামলা চালানো হয়। সানা’র বরাতে জানা গেছে, “ইসরায়েলি দখলদার বাহিনী বারজেহ গবেষণা কেন্দ্রের আশপাশে বোমা ফেলেছে।”
ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। তারা এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, “আমরা হামা শহরের সামরিক ঘাঁটি, হোমসের টি৪ বিমানবন্দর এবং দামেস্কের কথিত সামরিক অবকাঠামোতে হামলা চালিয়েছি।” ইসরায়েল দাবি করছে, এই স্থাপনাগুলো ইরান ও হিজবুল্লাহর সঙ্গে যুক্ত। গত বছরের ডিসেম্বরে সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের পতনের পর থেকে ইসরায়েল সিরিয়ায় শত শত হামলা চালিয়েছে। আসাদ ক্ষমতায় থাকাকালীনও এ ধরনের আক্রমণ নিয়মিত ছিল।
সিরিয়ান অবজারভেটরি ফর হিউম্যান রাইটস (এসওএইচআর) জানিয়েছে, গত বছর ৮ ডিসেম্বর আসাদের উৎখাতের পর থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইসরায়েল ৫০০টির বেশি হামলা চালিয়েছে। এ বছর এখন পর্যন্ত ৪৩টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। বারজেহ গবেষণা কেন্দ্র নিয়ে ইসরায়েল দাবি করে, এটি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ও রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির কাজে ব্যবহৃত হতো। এসওএইচআর-এর মতে, এই হামলাগুলো সিরিয়ার সামরিক শক্তি ধ্বংসের লক্ষ্যে চলছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, বুধবার রাতের হামলায় দামেস্কের আকাশে বিস্ফোরণের শব্দে ঘুম ভেঙে গেছে। একজন বাসিন্দা বলেন, “আমরা আর শান্তিতে ঘুমাতে পারি না। প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বোমা পড়ছে।” হামার বিমানবন্দরে আঘাতের পর সেখানকার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে বলে খবর।
ইসরায়েলের এই হামলা নতুন নয়। আসাদের আমল থেকেই তারা ইরান ও হিজবুল্লাহ-সংশ্লিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে আক্রমণ চালিয়ে আসছে। গত মাসে টি৪ ঘাঁটিতে দুটি হামলা হয়। এছাড়া গত বৃহস্পতিবার লাতাকিয়া প্রদেশে অস্ত্রের ডিপোতে আঘাত হানে ইসরায়েল। সিরিয়ার রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম এসব হামলাকে “আগ্রাসন” বলে অভিযোগ করেছে।
সিরিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, “ইসরায়েল আমাদের দেশের স্থিতিশীলতা নষ্ট করছে।” ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র নীতি প্রধান কাজা কালাস গত মাসে জেরুজালেম সফরে এই হামলাকে “অপ্রয়োজনীয়” বলে সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, “এতে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।”
সিরিয়া এখনও আসাদ-পরবর্তী অস্থিরতায় ভুগছে। ইসরায়েলের এই হামলা সেই সংকটকে আরও গভীর করছে। আন্তর্জাতিক মহল এই পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন।