মিয়ানমারে ভূমিকম্প: মৃতের সংখ্যা বেড়ে ২৮৮৬
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে প্রাণহানির সংখ্যা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২,৮৮৬ জনে। এছাড়া, ৪,৬৩৯ জন আহত হয়েছেন এবং ৩৭৩ জন এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। মিয়ানমারের তথ্য পরিষদের বরাত দিয়ে এই হৃদয়বিদারক খবরটি জানিয়েছে চীনা সংবাদমাধ্যম জিনহুয়া।
গত শুক্রবার মিয়ানমারের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শহর সাগাইং-এ আঘাত হানে ৭.৭ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশটিতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে এনেছে। ভূমিকম্পের তীব্রতা এতটাই প্রবল ছিল যে, এর কম্পন ছড়িয়ে পড়ে প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড এবং বাংলাদেশ পর্যন্ত। বাংলাদেশে তেমন কোনো বড় ক্ষয়ক্ষতির খবর না এলেও, থাইল্যান্ডে এর প্রভাবে বেশ কয়েকজনের প্রাণহানি ঘটেছে। সেখানে একটি নির্মাণাধীন বহুতল ভবন ধসে পড়ায় কয়েক ডজন মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়েন। উদ্ধারকারী দলগুলো এখনও তাদের বাঁচানোর জন্য মরিয়া চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) জানিয়েছে, মূল ভূমিকম্পের পর কয়েক ঘণ্টার মধ্যে অন্তত ১৪টি আফটারশক আঘাত হেনেছে। এই আফটারশকগুলোর মাত্রা ছিল ৩ থেকে ৫-এর মধ্যে। তবে সবচেয়ে ভয়ংকর ছিল ৬.৭ মাত্রার একটি আফটারশক, যা মূল ভূমিকম্পের মাত্র ১০ মিনিট পরে আঘাত হানে। এই ঘন ঘন কম্পনের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বেড়েছে। সিএনএন-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল সাগাইং শহরে বাড়িঘর, রাস্তাঘাট এবং অবকাঠামোর ব্যাপক ধ্বংস হয়েছে।
মিয়ানমারের এই অঞ্চলটি ইতিমধ্যেই দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা আর সামরিক শাসনের জেরে কঠিন সময় পার করছে। এর মধ্যে এই ভূমিকম্প স্থানীয়দের জন্য নতুন করে দুর্ভোগ নিয়ে এসেছে। ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে লাশ উদ্ধারের পাশাপাশি আহতদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালগুলোতে জায়গা সংকুলান হচ্ছে না। অনেকে খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাচ্ছেন, কারণ তাদের ঘরবাড়ি আর বাসযোগ্য নেই।
ইউএসজিএস-এর বিশেষজ্ঞরা একটি ভয়াবহ আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এই অনুমানের পেছনে কারণ হচ্ছে, অনেক এলাকায় এখনও উদ্ধারকাজ পৌঁছাতে পারেনি। দুর্গম পাহাড়ি এলাকা আর ভেঙে পড়া রাস্তার কারণে সাহায্য পৌঁছাতে বিলম্ব হচ্ছে। এছাড়া, নিখোঁজদের অনেকেই হয়তো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে আছেন।
মিয়ানমার সরকার জানিয়েছে, তারা দ্রুত উদ্ধার ও ত্রাণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সাহায্যের জন্যও তারা আবেদন করেছে। থাইল্যান্ড সরকার ইতোমধ্যে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় জরুরি সহায়তা পাঠিয়েছে। বাংলাদেশ থেকেও সতর্কতামূলক বার্তা জারি করা হয়েছে, যদিও এখানে বড় ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।