ভূমিকম্পে মৃত্যু লাফিয়ে বাড়ছে, মিয়ানমারে প্রাণহানি ১০ হাজার ছাড়ানোর শঙ্কা
মিয়ানমারে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মৃতের সংখ্যা প্রতিদিনই বাড়ছে। শুক্রবার ৭.৭ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে দেশটির সাগাইং শহরসহ বিস্তীর্ণ এলাকা। সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা ৬৯৪ জন বলে জানানো হলেও বাস্তবে তা আরও অনেক বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আহত হয়েছেন ১ হাজার ৬৭০ জনের বেশি। উদ্ধারকর্মীরা বলছেন, ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো হাজারো মানুষ আটকা পড়ে আছেন, ফলে মৃত্যুর সংখ্যা ১০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে।
রাজধানী নেপিডোর বিভিন্ন স্থানে রাস্তায় দেখা গেছে বড় বড় ফাটল, ধসে পড়েছে বহু ভবন। দেশটির সামরিক জান্তা সরকার বলছে, ভূমিকম্পের ভয়াবহতা এতটাই বেশি ছিল যে, শহরের পর শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সাগাইং শহরের বাসিন্দারা বলছেন, ভূমিকম্পের সময় তীব্র ঝাঁকুনি শুরু হলে তারা দিকবিদিক ছুটতে থাকেন। মুহূর্তের মধ্যেই বহু ভবন ভেঙে পড়ে, অনেকেই আর বের হতে পারেননি।
মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস জানিয়েছে, ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল ছিল ভূপৃষ্ঠের মাত্র ১৬ কিলোমিটার গভীরে, যা এতটা কম যে এতে ধ্বংসযজ্ঞ আরও ভয়াবহ হয়েছে। এই ভূমিকম্পের মাত্র এক মিনিট পর ৬.৮ মাত্রার একটি আফটারশক আঘাত হানে, যা ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়।
ভূমিকম্পের তীব্রতা শুধু মিয়ানমারেই সীমাবদ্ধ ছিল না, পার্শ্ববর্তী দেশ চীন, ভারত, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া ও বাংলাদেশেও কম্পন অনুভূত হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে থাইল্যান্ড, যেখানে রাজধানী ব্যাংককের বহু ভবন ধসে পড়েছে। এখন পর্যন্ত সেখানে শতাধিক মানুষ নিখোঁজ, উদ্ধার করা হয়েছে অন্তত ১০ জনের মরদেহ।
উদ্ধারকাজ চলছে, তবে পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে, দ্রুততার সঙ্গে সবকিছু করা সম্ভব হচ্ছে না। একজন উদ্ধারকর্মী বিবিসি বার্মিজ সার্ভিসকে জানিয়েছেন, “আমরা মৃতের সংখ্যা নির্ধারণ করতে পারছি না, কারণ প্রতিটি ধ্বংসস্তূপের নিচে লাশ পড়ে আছে। এখনো অনেক মানুষ ভেতরে আটকা পড়ে আছেন।”
প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আহতদের চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে, তবে অনেক হাসপাতালও ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ফলে আহতদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ মিয়ানমারের জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়েছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, জরুরি সহায়তা হিসেবে খাদ্য, পানি ও ওষুধ পাঠানো হচ্ছে। আন্তর্জাতিক রেডক্রস জানিয়েছে, ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে, কারণ গৃহহীন মানুষের সংখ্যা কয়েক লাখ ছাড়িয়ে যেতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভূমিকম্পের এই প্রভাব আরও কয়েক সপ্তাহ ধরে থাকবে। আফটারশক হতে পারে আরও কয়েকবার, যা ধসে যাওয়া ভবনগুলোর অবশিষ্ট অংশকেও গুঁড়িয়ে দিতে পারে।
এদিকে দেশটিতে টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হওয়ায় অনেক এলাকার তথ্য এখনো পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।