শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সকাল ৭:৩৪

ডিসিদের তদবির ও সরকারের স্তুতিবাক্য পরিহার করার নির্দেশ

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৯, ২০২৫ ১:২৬ অপরাহ্ণ
ডিসিদের তদবির ও সরকারের স্তুতিবাক্য পরিহার করার নির্দেশ

ডিসিদের তদবির ও সরকারের স্তুতিবাক্য পরিহার করার নির্দেশ

বাংলাদেশে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) জন্য নতুন একটি নির্দেশনা জারি করা হয়েছে, যা তাদের কার্যপ্রণালীতে বড় পরিবর্তন আনতে পারে। গত ২৭ মার্চ ২০২৫-এ জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে, ডিসিরা যেন তদবির বা প্রভাবশালীদের চাপে কাজ না করেন এবং সরকারের অতিরঞ্জিত প্রশংসা থেকে বিরত থাকেন। এই নির্দেশনার উদ্দেশ্য হলো প্রশাসনকে আরও নিরপেক্ষ, দক্ষ ও জনকেন্দ্রিক করা। সরকারের এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের মধ্যে আশা জাগালেও, অনেকে প্রশ্ন তুলছেন—এটা কি সত্যিই কার্যকর হবে?

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ডিসিদের কাজ হবে জনগণের সেবা করা, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং উন্নয়ন কার্যক্রম তদারকি করা। তবে এতদিন অনেক ডিসি রাজনৈতিক চাপে বা তদবিরের কারণে সরকারের গুণকীর্তন করতে বাধ্য হতেন। একজন সাবেক ডিসি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমাদের ওপর চাপ থাকতো। কখনো মন্ত্রীর ফোন, কখনো স্থানীয় নেতার অনুরোধ—না মানলে পদোন্নতি বা বদলির ভয়।” এই নির্দেশনা তাদের জন্য স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ করে দিতে পারে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারের আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল এই নির্দেশনার পেছনের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেন, “প্রশাসনকে জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে তাদের নিরপেক্ষতা জরুরি। সরকারের প্রশংসা করা তাদের কাজ নয়, জনগণের সেবা করাই মূল দায়িত্ব।” তিনি আরও জানান, আগের সরকারের আমলে ডিসিদের অনেক সময় জনগণের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে। এখন সেই ধারা ভাঙতে চায় সরকার।

স্থানীয়রা এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানালেও, বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। কক্সবাজারের একজন ব্যবসায়ী বলেন, “আগে দেখেছি, ডিসিরা এমপি বা মন্ত্রীর কথায় চলতেন। এখন যদি সত্যিই তদবির বন্ধ হয়, তাহলে আমাদের সমস্যা শোনার লোক পাব।” আরেকজন গ্রামবাসী বলেন, “সরকারের প্রশংসা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। এখন কাজ দেখতে চাই।”

বিশ্লেষকরা মনে করেন, এই নির্দেশনা প্রশাসনে স্বচ্ছতা আনতে পারে। তবে চ্যালেঞ্জও কম নয়। একজন সাবেক আমলা বলেন, “তদবির বন্ধ করতে হলে শুধু ডিসিদের নয়, রাজনীতিবিদদেরও মানসিকতা বদলাতে হবে।” তিনি যোগ করেন, সরকারের স্তুতিবাক্য বন্ধ করা সহজ নয়, কারণ এটা দীর্ঘদিনের অভ্যাস। তবে এই নির্দেশনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে জনগণের আস্থা ফিরতে পারে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য ডিসিদের মূল্যায়নে নতুন মানদণ্ড যুক্ত করা হবে। তাদের কাজের ফলাফল, জনগণের সঙ্গে সম্পর্ক এবং নিরপেক্ষতা বিচার করা হবে। একজন কর্মকর্তা বলেন, “এটা আমাদের জন্য চাপ, কিন্তু ভালো চাপ। আমরা এখন জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে পারব।”

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত