শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| রাত ৯:০৯

গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেই হামাসের হুঁশিয়ারি, নেতানিয়াহুর হুমকি, বিক্ষোভে ফুঁসছে জনতা

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৭, ২০২৫ ৫:৫৫ অপরাহ্ণ
গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেই হামাসের হুঁশিয়ারি, নেতানিয়াহুর হুমকি, বিক্ষোভে ফুঁসছে জনতা

গাজায় ধ্বংসযজ্ঞের মাঝেই হামাসের হুঁশিয়ারি, নেতানিয়াহুর হুমকি, বিক্ষোভে ফুঁসছে জনতা

গাজার পরিস্থিতি যেন এক ভয়াবহ দুর্যোগে রূপ নিয়েছে। ইসরায়েলের লাগাতার বোমাবর্ষণের মাঝে হামাস এবার স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিল, চাপ দিয়ে পণবন্দিদের মুক্ত করার চেষ্টা করলে তাদের লাশ ফেরত নিতে হবে। এর পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু—যদি হামাস দ্রুত পণবন্দিদের মুক্তি না দেয়, তবে তার চরম মূল্য দিতে হবে, প্রয়োজনে পুরো গাজা দখল করা হবে। এই টানটান উত্তেজনার মাঝেই গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত হয়েছেন হামাসের মুখপাত্র আবদেল-লতিফ আল-কানৌয়া। এদিকে, গাজা উপত্যকায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে ফুঁসছে সাধারণ মানুষ, যারা এবার খোদ হামাসের বিরুদ্ধেই বিক্ষোভে নামতে বাধ্য হয়েছে।

হামাসের সামরিক শাখা বুধবার স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, যদি ইসরায়েল জোর করে পণবন্দিদের উদ্ধারের চেষ্টা চালায়, তবে তাদের কফিনেই ফিরে যেতে হবে। তারা দাবি করেছে, পণবন্দিদের প্রতি কোনো অমানবিক আচরণ করা হচ্ছে না, বরং তাদের জীবিত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু ইসরায়েলের লাগাতার হামলার ফলে যদি সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তবে তার দায় তারা নেবে না। হামাসের ভাষায়, “প্রতি বার ইসরায়েল পণবন্দিদের মুক্ত করতে হামলা চালায়, প্রতি বার তাদের লাশ ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হয়।”

এর পাল্টা নেতানিয়াহু বলেছেন, “হামাস যত বেশি পণবন্দিদের মুক্তি নিয়ে তালবাহানা করবে, আমরা তত বেশি চাপ সৃষ্টি করব। যদি প্রয়োজন হয়, পুরো গাজা দখল করব।” তিনি দাবি করেন, হামাসের প্রতিরোধ যত দীর্ঘায়িত হবে, ততই বড় মূল্য দিতে হবে তাদের।

এদিকে, মঙ্গলবার এক পণবন্দির মা রুহমানা অভিযোগ করেন, তার ছেলের ব্যাপারে সরকারের কাছ থেকে কোনো তথ্য পাচ্ছেন না। তার অভিযোগের পরই নেতানিয়াহু ফোন করে তার সঙ্গে কথা বলেন এবং পণবন্দিদের মুক্তির বিষয়ে আশ্বাস দেন।

এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যেই গাজায় আবারও তাণ্ডব চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। উত্তর গাজার জাবালিয়াতে হামাসের মুখপাত্র আবদেল-লতিফ আল-কানৌয়া নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ভোরে এক বিমান হামলায় তার তাঁবু সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়। এই হামলায় আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম আল-আকসা টেলিভিশন।

শুধু আল-কানৌয়া নন, সম্প্রতি ইসরায়েলের অভিযানে নিহত হয়েছেন হামাসের আরও বেশ কয়েকজন শীর্ষ নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন হামাসের রাজনৈতিক কার্যালয়ের সদস্য ইসমাইল বারহুম এবং সালাহ আল-বারহুম। ২০২৩ সালের শেষ থেকে এখন পর্যন্ত হামাসের অন্তত ১১ জন উচ্চপদস্থ নেতা নিহত হয়েছেন।

গাজায় চলমান ইসরায়েলি অভিযানে প্রতিদিনই লাশের সারি দীর্ঘ হচ্ছে। মাত্র কয়েকদিনের হামলায় নিহত হয়েছেন প্রায় ৮৩০ জন ফিলিস্তিনি, আহত হয়েছেন ১৮০০ জন। গত ১৮ মার্চ ইসরায়েল যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করে নতুন করে হামলা শুরু করার পর থেকে এই মৃত্যুর মিছিল চলছে। এর আগে জানুয়ারিতে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় হওয়া সাময়িক যুদ্ধবিরতিও কোনো স্থায়ী সমাধান আনতে পারেনি।

এমন পরিস্থিতিতে ইসরায়েলের ভেতরেও চলছে চরম অস্থিরতা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক আক্রমণ ঠেকাতে ব্যর্থতার দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন ইসরায়েলের গাজা ডিভিশনের উত্তরাঞ্চলীয় ব্রিগেডের কমান্ডার হাইম কোহেন। এর আগে একই কারণে পদত্যাগ করেছেন মধ্য এবং দক্ষিণ ব্রিগেডের কমান্ডাররাও।

৭ অক্টোবরের ওই হামলায় ইসরায়েলে ঢুকে হামাসের প্রায় ১ হাজার যোদ্ধা ১২০০ মানুষ হত্যা করে এবং ২৫১ জনকে পণবন্দি করে গাজায় নিয়ে যায়। সেই ঘটনার পর থেকে ইসরায়েল প্রতিশোধ নিতে গাজায় একের পর এক হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ৫০ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।

অন্যদিকে, দীর্ঘদিন ধরে চলমান এই ধ্বংসযজ্ঞের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভ বাড়ছে। স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ গাজায় “অবিলম্বে” যুদ্ধবিরতি পুনর্বহালের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি মিসরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসি এবং জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহর সঙ্গে কথা বলে এই অঞ্চলে শান্তি ফেরানোর জন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালানোর তাগিদ দিয়েছেন।

এই যুদ্ধবিরতি আহ্বানের মাঝেই গাজা উপত্যকায় বিরল এক ঘটনা ঘটেছে। শত শত ফিলিস্তিনি এবার খোদ হামাসের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে। গাজার উত্তরাঞ্চলীয় বিত লাহিয়াতে তারা হামাসকে ‘সন্ত্রাসী গোষ্ঠী’ আখ্যা দিয়ে বিক্ষোভ করেছে। ব্যানার হাতে তারা স্লোগান দিয়েছে, “যুদ্ধ বন্ধ করে বেরিয়ে যাও হামাস!” তারা প্রশ্ন তুলেছে, “হাজার হাজার মানুষের প্রাণ দিয়ে হামাস কী অর্জন করতে চায়?”

তবে এই বিক্ষোভকে সহজভাবে নেয়নি হামাস। মুখোশধারী বন্দুকধারীরা লাঠি ও শটগান নিয়ে বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা চালায়। অনেককে আটকও করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

গাজার পরিস্থিতি দিন দিন আরও ভয়ংকর হয়ে উঠছে। একদিকে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণ, অন্যদিকে হামাসের নিয়ন্ত্রণ, এর মাঝখানে পিষ্ট হচ্ছে সাধারণ ফিলিস্তিনিরা। আন্তর্জাতিক চাপ সত্ত্বেও যুদ্ধ থামার কোনো লক্ষণ নেই, বরং নতুন নতুন সংঘাতের ইঙ্গিত স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি