শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:১৬

দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলে নিহত ২৪

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৭, ২০২৫ ৫:৪৫ অপরাহ্ণ
দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলে নিহত ২৪

দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলে নিহত ২৪

দক্ষিণ কোরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলীয় এলাকায় ভয়াবহ দাবানলের ঘটনায় কমপক্ষে ২৪ জন নিহত হয়েছেন। এই দুর্যোগ গত ২৪ মার্চ ২০২৫, সোমবার থেকে শুরু হয়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং বুধবার, ২৬ মার্চ পর্যন্ত চলমান রয়েছে। দেশটির গাংওন প্রদেশের গোচাং ও সকচো শহরের আশপাশে এই দাবানল সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তীব্র বাতাস এবং শুষ্ক আবহাওয়ার কারণে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা কঠিন হয়ে পড়েছে। এই ঘটনায় প্রায় ২৭,০০০ মানুষকে তাদের বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার দমকল বিভাগ জানিয়েছে, এই দাবানলের ফলে শতাধিক বাড়িঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে এবং হাজার হাজার হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে। নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই গ্রামীণ এলাকার বাসিন্দা, যারা আগুন থেকে পালাতে ব্যর্থ হয়েছেন। স্থানীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, আগুনের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে অনেকে ধোঁয়ায় শ্বাসরোধে মারা গেছেন। দমকলকর্মী, সেনাবাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় আগুন নেভানোর কাজ চলছে। তবে বাতাসের গতি ঘণ্টায় ৭০ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট ইউন সুক ইওল জরুরি বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থাকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের প্রথম কাজ হলো জনগণের জীবন রক্ষা করা। আমরা সব ধরনের সংস্থান ব্যবহার করে এই সংকট মোকাবিলা করব।” এই দাবানল নিয়ন্ত্রণে প্রায় ১,৫০০ দমকলকর্মী, ৫০টি হেলিকপ্টার এবং শতাধিক ফায়ার ইঞ্জিন মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া জাপান ও চীন থেকে সহায়তার প্রস্তাব এসেছে বলে জানা গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দক্ষিণ কোরিয়ায় দাবানলের ঝুঁকি বেড়েছে। এই বছরের শীতকালে স্বাভাবিকের তুলনায় কম বৃষ্টিপাত এবং উচ্চ তাপমাত্রা বনাঞ্চলকে শুষ্ক করে তুলেছে, যা আগুন ছড়িয়ে পড়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরি করেছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করে বলেছেন, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরও ঘন ঘন ঘটতে পারে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, আগুনের গতি এতটাই দ্রুত ছিল যে অনেকে প্রস্তুতি নেওয়ার সময় পাননি। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, “আমরা শুধু ধোঁয়া আর আগুন দেখতে পাচ্ছিলাম। পালানো ছাড়া কোনো উপায় ছিল না।”

এই দাবানলে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিঘ্নিত হয়েছে। সরকার জরুরি ত্রাণ হিসেবে ১০ বিলিয়ন ওন (প্রায় ৭.৫ মিলিয়ন ডলার) বরাদ্দ করেছে। তবে ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণ পরিমাণ এখনো নিরূপণ করা যায়নি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় দক্ষিণ কোরিয়ার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, “এই কঠিন সময়ে আমরা দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের পাশে আছি।”

এই ঘটনা দক্ষিণ কোরিয়ার ইতিহাসে সাম্প্রতিক সময়ের অন্যতম ভয়াবহ দাবানল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত উচ্চ সতর্কতা বজায় রাখা হয়েছে। সরকার জনগণকে শান্ত থাকার এবং নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি