স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতার বিরুদ্ধে ৮ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্তরা হলেন আদাবাড়িয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি রিমন সিকদার (৩১) এবং সাধারণ সম্পাদক লিটন খন্দকার (৪০)। এই ঘটনায় ব্যবসায়ী সৌরভ বশার বাদী হয়ে বাউফল থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে ২৬ মার্চ ২০২৫, বুধবার দুপুরে, এবং এটি স্থানীয় রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বুধবার দুপুর দেড়টার দিকে সৌরভ বশার তার পেট্রোলবাহী লড়ি (ঢাকা মেট্রো ঢ-৪২-০০২৫১) নিয়ে আদাবাড়িয়া ইউনিয়নের ছিদ্দিক বাজারে পৌঁছান। এ সময় লিটন খন্দকার, যিনি খন্দকার এন্টারপ্রাইজের মালিক, সৌরভের কাছে বাকিতে পেট্রোল চান। সৌরভ অপারগতা প্রকাশ করলে লিটনসহ ৫-৬ জন অজ্ঞাত ব্যক্তি এসে তাকে হুমকি দেন। তারা দাবি করেন, এলাকায় পেট্রোল বিক্রি করতে হলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। তর্কবিতর্কের একপর্যায়ে তারা সৌরভের কাছ থেকে পেট্রোল বিক্রির নগদ ৮ লাখ ৬৫ হাজার টাকাভর্তি একটি কালো ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। এছাড়া, তারা গাড়ি থেকে ৪০০ লিটার পেট্রোলের দুটি ব্যারেল এবং ২৪ পিস মবিল নামিয়ে রাখেন। বাধা দেওয়ায় সৌরভকে মারধর করে জখম করা হয়।
বাউফল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামাল হোসেন এজাহার প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “অভিযোগটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। সত্যতা প্রমাণিত হলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে অভিযুক্ত লিটন খন্দকার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করেন, “সৌরভের সঙ্গে বাকিতে পেট্রোল নেওয়া নিয়ে বাকবিতণ্ডা হয়েছিল, তবে টাকা ছিনতাই বা মারধরের ঘটনা সত্য নয়। আমার সুনাম নষ্ট করার জন্য এটি মিথ্যা অভিযোগ।” রিমন সিকদার জানান, তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ছিনতাইয়ের সঙ্গে তার কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
এই ঘটনা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। স্বেচ্ছাসেবক দলের একাংশ এই অভিযোগকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ বলে আখ্যা দিয়েছে। একজন নেতা বলেন, “এটি আমাদের দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করার চেষ্টা।” অন্যদিকে, স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, এলাকায় চাঁদাবাজি ও দলীয় প্রভাব খাটানোর ঘটনা নতুন নয়। একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “এ ধরনের ঘটনায় আমরা ব্যবসায়ীরা প্রায়ই হয়রানির শিকার হই।”
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর স্থানীয়রা দ্রুত থানায় খবর দিলে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি, তবে তদন্তে অগ্রগতি রয়েছে। এদিকে, সৌরভ বশার চিকিৎসার জন্য স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনি বলেন, “আমি শুধু আমার টাকা ফেরত চাই এবং এই অপরাধীদের শাস্তি দেখতে চাই।”
এই ঘটনা বাউফলের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে। তদন্তের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে এই অভিযোগের ভবিষ্যৎ। স্থানীয়রা এখন পুলিশের পদক্ষেপের দিকে তাকিয়ে আছে।