শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২০

ইসরায়েলের হামলায় হামাসের মুখপাত্র নিহত

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৭, ২০২৫ ৫:৫৯ অপরাহ্ণ
ইসরায়েলের হামলায় হামাসের মুখপাত্র নিহত

ইসরায়েলের হামলায় হামাসের মুখপাত্র নিহত

ইসরায়েলি বিমান হামলায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাসের একজন শীর্ষ মুখপাত্র আবদেল-লতিফ আল-কানুয়া নিহত হয়েছেন। ২৬ মার্চ মঙ্গলবার রাতে গাজার উত্তরাঞ্চলের জাবালিয়া শরণার্থী শিবিরে এই ঘটনা ঘটে। হামাস-নিয়ন্ত্রিত আল-আকসা টেলিভিশনের বরাতে জানা গেছে, আল-কানুয়া তার তাঁবুতে অবস্থানকালে ইসরায়েলি বাহিনী তাকে লক্ষ্য করে হামলা চালায়। এই হামলায় তার সঙ্গে আরও কয়েকজন আহত হয়েছেন, যদিও নিহতের সংখ্যা নিয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য এখনো প্রকাশিত হয়নি। ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী এই হামলার দায় স্বীকার করেছে এবং বলেছে যে, তারা হামাসের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে নিশানা করেছে।

গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ব্যাপক হামলা পুনরায় শুরু করার পর থেকে এ পর্যন্ত ৮৩০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে আল-কানুয়ার মৃত্যুকে হামাসের জন্য একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। হামাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই হামলা ইসরায়েলের “ভয়ংকর আগ্রাসনের” অংশ এবং তারা এর জন্য প্রতিশোধ নেবে। আল-কানুয়া দীর্ঘদিন ধরে হামাসের সামরিক শাখা আল-কাসাম ব্রিগেডের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করছিলেন এবং গোষ্ঠীটির বিভিন্ন অভিযানের তথ্য প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন।

ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র জানিয়েছেন, “আমরা হামাসের সন্ত্রাসী কার্যকলাপের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আল-কানুয়া ছিলেন একজন গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য, যিনি গত ৭ অক্টোবর ২০২৩-এর হামলার পর থেকে গোষ্ঠীটির প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন।” ২০২৩ সালের ওই হামলায় হামাস ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিককে হত্যা করে এবং ২৫০ জনের বেশি জিম্মি করে, যার ফলে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। এরপর থেকে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, ৫০,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।

এই হামলার পর গাজার পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা এবং স্থানীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, জাবালিয়া এলাকায় ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চলছে। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, “রাতে হঠাৎ করে বিমান হামলা শুরু হয়। আমরা কোথায় যাব, কিছুই বুঝতে পারিনি।” হামাসের একজন নেতা বলেন, “ইসরায়েল শুধু আমাদের নেতাদেরই নয়, সাধারণ মানুষকেও লক্ষ্য করছে। এটি গণহত্যা।” তবে ইসরায়েল দাবি করেছে, তারা শুধুমাত্র সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালাচ্ছে এবং বেসামরিক মৃত্যু এড়াতে চেষ্টা করছে।

এদিকে, গাজায় চলমান সংঘাতে জিম্মিদের ভাগ্য নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। হামাস জানিয়েছে, ইসরায়েল যদি জোর করে জিম্মিদের উদ্ধারের চেষ্টা করে এবং হামলা অব্যাহত রাখে, তবে জিম্মিদের জীবন বিপন্ন হতে পারে। ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, “হামাস সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত আমরা থামব না।” তিনি দাবি করেন, আল-কানুয়ার মতো নেতাদের নিশ্চিহ্ন করা হামাসের উপর চাপ সৃষ্টি করবে এবং জিম্মিদের মুক্তির সম্ভাবনা বাড়াবে।

এদিকে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই হামলার নিন্দা জানিয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিবের মুখপাত্র ফারহান হক বলেন, “গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের মৃত্যুতে আমরা গভীরভাবে শঙ্কিত। যুদ্ধবিরতি মানা উচিত।” মিশরও ইসরায়েলের এই হামলাকে “যুদ্ধবিরতি চুক্তির লঙ্ঘন” হিসেবে অভিহিত করে অবিলম্বে হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। তবে হামাসও দাবি করেছে, ইসরায়েল প্রথমে চুক্তি ভঙ্গ করেছে।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, আল-কানুয়ার মৃত্যু হামাসের প্রচারণায় প্রভাব ফেলতে পারে, তবে গোষ্ঠীটির সামরিক ক্ষমতা অক্ষুণ্ন রয়েছে। এই ঘটনা মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি