ইউনূসের চীন সফরে স্বাক্ষর হতে পারে ১৩৮ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের আসন্ন চীন সফরকে কেন্দ্র করে সরকারের প্রত্যাশা বেশ উঁচুতে। আশা করা হচ্ছে, এই সফরে চীনের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে, যার আওতায় বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ইউয়ান, অর্থাৎ প্রায় ১৩৮ মিলিয়ন ডলারের একটি অনুদান পাবে। এই অর্থ দুই দেশের যৌথ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যবহার করা হবে, যার মধ্যে একটি বিশ্বমানের আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনা বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এই অনুদানের প্রতিশ্রুতি প্রথমে এসেছিল গত জুলাইয়ে, যখন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার সরকারের পতনের পর এই প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে পড়েছিল। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এখন এটিকে পুনরায় চালু করতে এবং চূড়ান্ত করতে তৎপর হয়েছে।
মুহাম্মদ ইউনূস আগামী ২৬ মার্চ চীনের উদ্দেশে রওনা দেবেন। তার এই সফরের প্রধান উদ্দেশ্য হচ্ছে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ককে আরও মজবুত করা। সফরের কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে বোয়াও ফোরামে অংশগ্রহণ এবং ২৮ মার্চ চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক। এই বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো— চট্টগ্রামে একটি চীনা অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা, মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) নিয়ে আলোচনা, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা, এবং আসিয়ানে বাংলাদেশের যোগদানের বিষয়ে সমর্থন আদায়।
অনুদানের একটি বড় অংশ ব্যবহার করা হবে স্বাস্থ্য খাতে। পরিকল্পনা রয়েছে ৫০০ থেকে ১,০০০ শয্যার একটি অত্যাধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের, যা হতে পারে ঢাকার উত্তরা বা মিরপুর অঞ্চলে, অথবা চট্টগ্রামে। এই হাসপাতালটি শুধু চিকিৎসা সেবাই দেবে না, বরং দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় একটি নতুন মান স্থাপন করবে। এছাড়াও, চীনের পক্ষ থেকে একটি উচ্চতর চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্থাপনের প্রতিশ্রুতিও এসেছে, যা বাংলাদেশের চিকিৎসা শিক্ষার ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হতে পারে।
চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন এই সফর নিয়ে বেশ আশাবাদী। তিনি বলেন, “আমরা আশা করছি এই সফর খুবই ফলপ্রসূ হবে। এর মাধ্যমে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি আসবে এবং কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণাও আসতে পারে।” এই সফর শুধু অর্থনৈতিক সহযোগিতাই নয়, বরং দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী কৌশলগত সম্পর্কের ভিত্তিকেও আরও শক্তিশালী করবে বলে মনে করা হচ্ছে।
ইউনূসের এই সফর বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এমন একটি বড় চুক্তি স্বাক্ষরিত হলে তা দেশের অর্থনীতি ও উন্নয়নের পথে একটি বড় ধাপ হিসেবে বিবেচিত হবে।