শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| সন্ধ্যা ৭:২০

ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল

প্রতিবেদক
staffreporter
মার্চ ২৪, ২০২৫ ৩:৪৫ অপরাহ্ণ
ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল

ফিলিস্তিনিদের বিতাড়নে পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে ইসরায়েল

ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাতে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। ফিলিস্তিনি জনগণকে তাদের ভূমি থেকে বিতাড়িত করতে ইসরায়েল পানিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রোববার (২৩ মার্চ, ২০২৫) পর্যন্ত সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলোতে বলা হচ্ছে, গাজা ও পশ্চিম তীরে পানির সরবরাহ বন্ধ করে এবং জলাশয় ধ্বংস করে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। এই কৌশলকে অনেকে “জল নিয়ন্ত্রণ যুদ্ধ” হিসেবে আখ্যায়িত করছেন, যা ফিলিস্তিনিদের বাস্তুচ্যুত করার একটি নিষ্ঠুর উপায়।

ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর তথ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় পানির পাম্প, পাইপলাইন এবং জলাশয়ের অবকাঠামো ধ্বংস করেছে। জাতিসংঘের ত্রাণ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গত ১৭-১৮ মার্চ রাতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় নতুন করে বিমান হামলা শুরু করে, যার ফলে শত শত মানুষ হতাহত হয়েছে। এর পাশাপাশি পানির সরবরাহ বন্ধ থাকায় সেখানকার পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, “পানি ছাড়া আমরা বাঁচতে পারছি না। দোকানে খাবার নেই, দাম আকাশছোঁয়া। আমরা আবারও পালাতে বাধ্য হচ্ছি।”

অভিযোগ উঠেছে, ইসরায়েল পানির উৎসগুলোর ওপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে ফিলিস্তিনিদের দৈনন্দিন জীবনকে নিয়ন্ত্রণ করছে। ফিলিস্তিনি নেতা মাহমুদ আব্বাস এক বিবৃতিতে বলেছেন, “ইসরায়েল পানিকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে। এটি জনগণকে জোরপূর্বক স্থানান্তরের একটি কৌশল।” পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারীরা ফিলিস্তিনি গ্রামগুলোর পানির উৎস দখল করে নিচ্ছে, যার ফলে কৃষি ও গৃহস্থালি কাজে পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অনেক পরিবার তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সাম্প্রতিক যুদ্ধবিরতির পর থেকে ইসরায়েল স্নাইপার, ড্রোন এবং কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট খাদ্য ও পানির অভাবের মাধ্যমে গাজায় ১৫০ জনেরও বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে। গত জানুয়ারিতে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া পোস্টগুলোতে দেখা গেছে, ইসরায়েল পানির সরবরাহ বন্ধ করে ফিলিস্তিনিদের তৃষ্ণায় কষ্ট দিয়েছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “যে ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের পানি থেকে বঞ্চিত করেছে, তার মিত্র আমেরিকা এখন আগুন নেভাতে সমুদ্র থেকে পানি বহন করছে। এটাই কুদরতের বিচার।”

ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তারা দাবি করেছে, গাজায় হামাসের সামরিক অবকাঠামো ধ্বংস করতে গিয়ে অসাবধানতাবশত পানির অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এটি একটি পরিকল্পিত কৌশল। রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, দুই মাসের যুদ্ধবিরতির পর ইসরায়েল আবারও পূর্ণমাত্রায় হামলা শুরু করেছে, যার ফলে গাজার জনগণ আবারও জীবন বাঁচাতে পালাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনিরা আশা করছে, যুদ্ধবিরতির পর পানির সরবরাহ পুনরুদ্ধার হবে। কিন্তু বাস্তবে তারা দেখছে ধ্বংসস্তূপ আর দুর্ভোগ। একজন গাজাবাসী বলেন, “আমাদের বাচ্চারা পানির জন্য কাঁদছে। এটা কোনো জীবন নয়।” বিশ্লেষকরা বলছেন, পানির এই সংকট শুধু জীবনধারণের সমস্যাই নয়, এটি ফিলিস্তিনিদের তাদের ভূমি থেকে উচ্ছেদের একটি নীরব অস্ত্র।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি