ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলার জন্য ভারতকে দায়ী করল পাকিস্তান
পাকিস্তানের বেলুচিস্তান প্রদেশে যাত্রীবাহী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় পাকিস্তান সরকার ভারতকে দায়ী করেছে। গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) বোলান জেলায় এ হামলা চালানো হয়, যেখানে প্রায় ৪৫০ জন যাত্রী ছিলেন। হামলাকারীরা ট্রেনটি ছিনতাই করে যাত্রীদের জিম্মি করে। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান জানান, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সন্ত্রাসীরা আফগানিস্তানে তাদের সহযোগীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছিল এবং এই হামলার পেছনে বিদেশে অবস্থিত সন্ত্রাসী সংগঠনের নেতৃত্ব রয়েছে।
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তালাল চৌধুরী জিও টিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, “ট্রেন হামলার সঙ্গে ৭০ থেকে ৮০ জন সন্ত্রাসী জড়িত ছিল। এসব সন্ত্রাসীদের যারা নিয়ন্ত্রণ করছে তারা প্রতিবেশী দেশে আছে। যারা তাদের ডলার দিচ্ছে তারা অন্য দেশে আছে। আমাদের শত্রু ভারত অবশ্যই এটিকে সমর্থন করবে।”
হামলার দায় স্বীকার করেছে বেলুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ), যা বেলুচিস্তানের স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে এ পর্যন্ত ২৭ জন সন্ত্রাসী নিহত হয়েছে এবং ১৫৫ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে।
তবে এই ঘটনায় ৬ জন সেনা সদস্য নিহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে।
পাকিস্তান সরকারের এই অভিযোগের বিষয়ে ভারত এখনও কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলমান উত্তেজনার মধ্যে এই ঘটনা নতুন করে উত্তাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের সন্ত্রাসী হামলা পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির ইঙ্গিত দেয় এবং এ অঞ্চলে স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা প্রয়োজন।
এদিকে, জিম্মি যাত্রীদের মধ্যে ১৭ জন আহত হয়েছেন, যাদের স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান এখনও চলছে এবং অবশিষ্ট যাত্রীদের উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এই ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন এবং সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দেশের নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় আমরা কোনো আপস করব না। সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।”
এই ঘটনার পর পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে উদ্বেগ ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। বিশেষ করে যারা ট্রেন ভ্রমণ করেন, তাদের মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সরকারি সূত্র জানিয়েছে, দেশের রেলওয়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
আন্তর্জাতিক মহল এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং পাকিস্তানের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে। তারা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে পাকিস্তানকে সমর্থন দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
এই হামলা পাকিস্তানের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা তুলে ধরেছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা নির্দেশ করে। সরকার ও নিরাপত্তা বাহিনীর সমন্বিত প্রচেষ্টায়ই কেবল সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।