ফিলিস্তিনে ট্রাম্পের ‘শেষ সতর্কতা’, হামাসের প্রত্যাখ্যান ও নতুন যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠী হামাসের উদ্দেশে ‘লাস্ট ওয়ার্নিং’ দিয়েছেন, যেখানে তিনি গাজার সকল ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে এবং হামাস নেতাদের গাজা ছাড়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে, হামাস ট্রাম্পের এই হুমকিকে প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এটি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহুর প্রতি সমর্থনেরই অংশ, যার মাধ্যমে তিনি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন না করে গাজার জনগণকে আরও কষ্টে রাখার সুযোগ পাচ্ছেন।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে হামাসের মুখপাত্র আব্দেল-লফিত আল-কানুয়া বলেন, “আমাদের জনগণের বিরুদ্ধে ট্রাম্পের হুমকি নেতানিয়াহুর জন্য সমর্থন প্রদর্শন করে। যেন সে যুদ্ধবিরতির চুক্তি কার্যকর না করে থাকতে পারে এবং আমাদের জনগণকে ক্ষুধার্ত রাখার নীতি শক্ত করতে পারে। তবে বাকি ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্ত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে যাওয়া এবং মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে যে যুদ্ধবিরতি হয়েছে সেটি মানতে ইসরায়েলকে বাধ্য করা।”
এদিকে, ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন, “এটি আপনাদের জন্য শেষ সতর্কতা! (হামাসের) নেতৃত্বের জন্য এখন সময় এসেছে গাজা ত্যাগ করার। আপনাদের জন্য এখনও এই সুযোগটি রয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “গাজার জনগণের কাছে আমার বার্তা: আপনাদের জন্য একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ অপেক্ষা করছে, কিন্তু যদি আপনারা জিম্মিদের আটকে রাখেন তাহলে তেমনটি হবে না। যদি আপনারা তেমন কিছু করেন, তাহলে আপনি মৃত! স্মার্ট সিদ্ধান্ত নিন।”
তবে গাজার সাধারণ মানুষ ট্রাম্পের এই হুমকিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না বলে জানায় আলজাজিরা। একজন ফিলিস্তিনি বলেন, “আমাদের শিকড় গাজা উপত্যকায়। ইসরায়েল আমাদের বাড়ি, আমাদের পাড়া ধ্বংস করে দিয়েছে, কিন্তু আমরা এখানেই থাকব, মৃত্যুর আগ পর্যন্ত।”
এই পরিস্থিতির মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র হামাসের কাছে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির নতুন একটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। এই প্রস্তাব অনুযায়ী, হামাসকে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি বন্দিকে মুক্তি দিতে হবে এবং এর বিনিময়ে ৬০ দিনের জন্য সব ধরনের সামরিক অভিযান বন্ধ থাকবে। স্কাই নিউজ অ্যারাবিয়া জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া প্রস্তাবে গাজা-মিসর সীমান্তের ফিলাডেলফি করিডর নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর কথাও বলা হয়েছে।
তবে কবে এবং কীভাবে যুক্তরাষ্ট্র এই প্রস্তাব হামাসের কাছে পাঠিয়েছে, তা এখনও নিশ্চিত নয়। হামাসের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা প্রস্তাবটি পর্যালোচনা করছে।
যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপে দখলদার ইসরায়েল গাজায় সব ধরনের হামলা বন্ধ করবে, সৈন্য প্রত্যাহার করবে এবং মানবিক সহায়তা প্রবেশে বাধা দেবে না। এরপর শুরু হবে গাজার পুনর্গঠনের কাজ।
এদিকে, ইসরায়েলের সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানায়, হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি আলোচনা নিয়ে অসন্তুষ্ট হয়েছেন যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু। মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস জানিয়েছে, এই আলোচনার ফলে ইসরায়েল উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে এবং তারা বিষয়টি ভালোভাবে নিচ্ছে না।
এই মুহূর্তে হামাস, যুক্তরাষ্ট্র, কাতার ও মিসরের মধ্যস্থতায় দোহায় সরাসরি আলোচনা চলছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, হামাসের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি সংলাপ যুদ্ধের গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে এবং ইসরায়েলের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।