সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| রাত ৮:৩০

গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ইসরায়েলের নতুন শর্তারোপ

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০২৫ ১:৫৪ অপরাহ্ণ

গাজায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ের জন্য ইসরায়েলের নতুন শর্তারোপ

গাজায় যুদ্ধবিরতির প্রথম পর্যায় শেষের পথে, আর দু’-তিন দিনের মধ্যে দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হওয়ার কথা। তবে এই পর্ব শুরু করতে ইসরায়েল চারটি শর্ত দিয়েছে। এসব শর্ত পূরণ না হলে চুক্তির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন দেশটির জ্বালানিমন্ত্রী ও যুদ্ধকালীন মন্ত্রিসভার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এলি কোহেন।

মঙ্গলবার ইসরায়েলের টিভি চ্যানেল কান-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এলি কোহেন বলেন, যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায়ে যেতে হলে ইসরায়েলের চারটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত মানতে হবে। প্রথমত, ৭ অক্টোবর ও তার আগে গাজায় বন্দি হওয়া সব ইসরায়েলিকে মুক্তি দিতে হবে। দ্বিতীয়ত, হামাসকে গাজা উপত্যকা থেকে সম্পূর্ণভাবে বিদায় নিতে হবে। তৃতীয়ত, গাজাকে অবশ্যই সম্পূর্ণ অস্ত্রমুক্ত করতে হবে এবং চতুর্থত, পুরো গাজা এলাকায় ইসরায়েলের নিরাপত্তা সংক্রান্ত পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকতে হবে। তিনি আরও বলেন, এই শর্তগুলো পূরণ না হলে যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় পর্যায় বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না এবং ইসরায়েল গাজার স্থায়ী শান্তির জন্য কঠোর অবস্থান নিয়ে এগোচ্ছে।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ও তার মিত্রগোষ্ঠী নজিরবিহীন হামলা চালিয়ে ইসরায়েলের সীমান্তে প্রবেশ করে। এতে ১,২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এর আগে কখনোই ইসরায়েলে এত বড় আকারের হামলা ঘটেনি। ওই হামলার প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে, যা প্রায় ১৫ মাস ধরে চলে। এই দীর্ঘ সময় ধরে সংঘাত চলার ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের চাপ বাড়তে থাকে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের প্রবল চাপে ২০২৪ সালের ১৯ জানুয়ারি ইসরায়েল গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করতে বাধ্য হয়।

গাজায় সংঘাত থামাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ২০২৪ সালের ২৩ জুন একটি তিন স্তরের যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রস্তাব করেন, যা ধাপে ধাপে বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম পর্যায়ের মেয়াদ ছিল ৬ সপ্তাহ। শর্ত ছিলো এ পর্বে ৩৩ জন জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া হবে, যাদের মধ্যে বয়স্ক ও নারী বন্দিরা অগ্রাধিকার পাবেন। এর বিনিময়ে ইসরায়েল গাজার জনবসতিপূর্ণ এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহার করে নেবে, কারাগারে বন্দি শতাধিক ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দেবে এবং প্রতিদিন গাজায় প্রবেশ করবে ৬০০টি ত্রাণবাহী ট্রাক।

এই চুক্তির দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হলে সংঘাত স্থায়ীভাবে শেষ হবে গাজায়। চুক্তির শর্ত অনুসারে, এ পর্যায়ে অবশিষ্ট জিম্মিদের মুক্তি দেবে হামাস এবং বিনিময়ে বিভিন্ন কারাগারে বন্দি ফিলিস্তিনিদের মধ্যে ১,০০০ জনকে মুক্তি দেবে ইসরায়েল। পাশাপাশি, উপত্যকা থেকে ইসরায়েলি সেনাদের সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার করা হবে। তৃতীয় পর্যায়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকাকে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় গাজার অর্থনৈতিক ও মানবিক পুনর্গঠনে সহায়তা করবে।

তবে ইসরায়েলের দেওয়া নতুন শর্তগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কঠিন বিষয় হলো, হামাসের গাজা থেকে সম্পূর্ণ বিদায় নেওয়া এবং গাজার নিরাপত্তা ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে রাখা। হামাস বরাবরই বলে আসছে, তারা গাজা ছাড়বে না এবং ইসরায়েলের নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণের দাবি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ এই চুক্তিকে বাস্তবায়ন করতে চাইছে, কারণ দীর্ঘ সংঘাতের ফলে গাজায় মানবিক বিপর্যয় চরম আকার ধারণ করেছে। তবে ইসরায়েলের নতুন শর্ত চুক্তির ভবিষ্যৎকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। কূটনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, ইসরায়েল যদি তার অবস্থান থেকে কিছুটা নমনীয় না হয়, তাহলে দ্বিতীয় পর্যায় নিয়ে আলোচনা আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে। অপরদিকে, হামাস যদি ইসরায়েলের দেওয়া শর্তগুলো মানতে অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে যুদ্ধবিরতির পুরো পরিকল্পনা ভেস্তে যেতে পারে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ

আপনার জন্য নির্বাচিত