ভারত সহ চার ব্রিকস দেশকে ১৫০% শুল্কের হুমকি দিলেন ট্রাম্প
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বিশ্ব বাণিজ্যে মার্কিন ডলারের আধিপত্য রক্ষায় কঠোর অবস্থান নিলেন। ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত, চীন ও দক্ষিণ আফ্রিকা নিয়ে গঠিত ব্রিকস জোট যদি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প মুদ্রা চালুর চেষ্টা করে, তাহলে তাদের পণ্যের ওপর ১৫০% আমদানি শুল্ক বসানো হবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন তিনি।
ওয়াশিংটনে রিপাবলিকান গভর্নরস অ্যাসোসিয়েশনের এক ভাষণে ট্রাম্প বলেন, “ব্রিকস রাষ্ট্রগুলো আমাদের ডলার ধ্বংস করার চেষ্টা করছিল। তারা একটি নতুন মুদ্রা তৈরি করতে চেয়েছিল। আমি তখনই ঘোষণা দিয়েছিলাম— যে কোনো ব্রিকস রাষ্ট্র যদি ডলারের বিকল্পের কথা চিন্তা করে, তবে তাদের পণ্যের ওপর ১৫০% শুল্ক আরোপ করা হবে। আমরা তোমাদের পণ্য চাই না।”
বিশ্ব অর্থনীতিতে মার্কিন ডলারের আধিপত্য চ্যালেঞ্জ জানাতে ব্রিকস দীর্ঘদিন ধরে বিকল্প মুদ্রা চালুর বিষয়ে আলোচনা করে আসছে। ২০২৩ সালে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে এই পরিকল্পনা সামনে আসে, যেখানে সদস্য দেশগুলো নিজস্ব মুদ্রায় লেনদেনের পথ খুঁজতে শুরু করে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ব্রিকস দেশগুলো নিজেদের মুদ্রায় বাণিজ্য করতে পারলে আন্তর্জাতিক বাজারে ডলারের প্রভাব কমে যাবে এবং যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দুর্বল হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রাম্প বিষয়টি একেবারে শুরুতেই কঠোরভাবে দমন করতে চান।
এর আগে ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, যদি ব্রিকস দেশগুলো নিজস্ব মুদ্রা চালু করে বা ডলার বর্জন করে, তাহলে তাদের আমদানির ওপর ১০০% শুল্ক বসানো হবে। তবে এবার সেই হুমকির মাত্রা আরও বাড়িয়ে ১৫০% করলেন তিনি।
ট্রাম্প বলেন, “কেউ যদি আমাদের ডলারের সঙ্গে খেলতে চায়, তাহলে তাদের জন্য আমেরিকার বাজার বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের অর্থনীতি ধ্বংস করার চেষ্টা করলে, তার ফল ভোগ করতে হবে।”
ব্রিকস জোটের দেশগুলোর পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যাপকভাবে রপ্তানি হয়। বিশেষ করে চীন ও ভারতের অনেক পণ্য আমেরিকান ভোক্তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ট্রাম্পের হুমকির ফলে এই দেশগুলোর অর্থনীতিতে বড় প্রভাব পড়তে পারে।
এখন পর্যন্ত ট্রাম্পের নতুন হুমকির বিষয়ে ব্রিকসভুক্ত দেশগুলো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়নি। তবে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্পের কঠোর নীতির ফলে ব্রিকস জোট আরও শক্তিশালী হতে পারে এবং তারা নতুন অর্থনৈতিক ব্লক গঠনের দিকে এগোতে পারে।
বিশ্লেষকরা আরও বলছেন, যদি ব্রিকস দেশগুলো নিজেদের মুদ্রায় লেনদেন চালু করতে পারে এবং মার্কিন বাজারের বিকল্প খুঁজে নেয়, তাহলে এটি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য নতুন এক মোড় তৈরি করবে। অন্যদিকে, যদি ট্রাম্প সত্যিই ১৫০% শুল্ক বসান, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের আমদানির খরচ বেড়ে যাবে, যা মার্কিন ভোক্তাদের জন্যও ক্ষতিকর হতে পারে।
ট্রাম্পের ঘোষণার ফলে বিশ্ববাণিজ্যে নতুন অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। ডলারের বিকল্প গড়ে তুলতে ব্রিকস কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ট্রাম্পের কঠোর নীতির ফলে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক আরও জটিল হয়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।