সোমবার, ১০ই মার্চ, ২০২৫| বিকাল ৫:৩৬

“ট্রাম্প-মোদি বৈঠক: বাংলাদেশ ইস্যু অনুচ্চারিত!”

প্রতিবেদক
staffreporter
ফেব্রুয়ারি ১৪, ২০২৫ ৬:১৩ অপরাহ্ণ
"ট্রাম্প-মোদি বৈঠক: বাংলাদেশ ইস্যু অনুচ্চারিত!"

“ট্রাম্প-মোদি বৈঠক: বাংলাদেশ ইস্যু অনুচ্চারিত!”

ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপাক্ষিক বৈঠক। বৈঠকে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য, জ্বালানি নিরাপত্তা ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হলেও একবারও উঠে আসেনি বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বা ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রসঙ্গ।

বৈঠক শেষে এক সংক্ষিপ্ত সংবাদ সম্মেলনে ভারতের এক সাংবাদিক বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং পটপরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে ট্রাম্পের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। জবাবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সাফ জানিয়ে দেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে তার দেশের কোনো ধরনের ভূমিকা নেই। তিনি বলেন, “বাংলাদেশের বিষয়টি আমি মোদির ওপর ছেড়ে দিতে চাই।” তার এই বক্তব্যের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, ওয়াশিংটন বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ভারতের উপরই ন্যস্ত করছে।

এদিকে, মোদি-ট্রাম্প বৈঠকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও প্রতিরক্ষা চুক্তি। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প জানিয়েছেন, ভারতকে অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান বিক্রির বিষয়ে আলোচনা হয়েছে এবং দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আগের চেয়ে আরও শক্তিশালী হয়েছে। ট্রাম্প মোদিকে ‘বিশেষ বন্ধু’ বলে অভিহিত করেন এবং বলেন, “ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক এখন এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা একসঙ্গে আরও শক্তিশালী বাণিজ্যিক ও সামরিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলব।”

প্রতিরক্ষা খাত ছাড়াও জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়েও আলোচনা হয় বৈঠকে। মোদি জানিয়েছেন, “ভারতের ক্রমবর্ধমান জ্বালানি চাহিদা পূরণে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চাই। খুব শিগগিরই দুই দেশের মধ্যে একটি পারস্পরিক লাভজনক বাণিজ্য চুক্তি হবে, যা মূলত খনিজ তেল ও গ্যাসের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠবে।”

এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, ট্রাম্প বৈঠকে সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে কড়া অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি ঘোষণা দেন, “বিশ্বের অন্যতম শত্রু, যিনি ২০০৮ সালের মুম্বাই হামলায় জড়িত, তাকে বিচারের সম্মুখীন করতে ভারতে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।” ট্রাম্পের এই ঘোষণার পর মোদি তাকে ধন্যবাদ জানান এবং বলেন, “এটি সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াইয়ের এক গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি।”

বৈঠকে ভারত-চীন সীমান্ত পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ট্রাম্প বলেছেন, “আমি দেখেছি সীমান্তে সংঘর্ষ ও উত্তেজনার ঘটনা ঘটছে। আমার ধারণা, এটি দীর্ঘদিন ধরেই চলছে। যদি পারি, তবে আমি এই বিষয়ে সাহায্য করতে চাই, কারণ এটি বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।”

এছাড়া ট্রাম্প তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (মেগা) স্লোগান তুলে ধরেন এবং বলেন, তার প্রশাসনের লক্ষ্য আমেরিকাকে পুনরায় শক্তিশালী করা। জবাবে মোদি বলেন, “আমরা বিকশিত ভারত গড়ার লক্ষ্যে কাজ করছি। একে বলা যেতে পারে ‘মেক ইন্ডিয়া গ্রেট এগেইন’ (মিগা)। ভারত ও আমেরিকা যখন একসঙ্গে কাজ করবে, তখন ‘মেগা’ ও ‘মিগা’ মিলিয়ে হবে উন্নয়নের ‘মেগা পার্টনারশিপ’!”

তবে পুরো বৈঠকজুড়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন নিয়ে কোনো আলোচনা না হওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে কৌতূহলের সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের নিষ্ক্রিয়তা এবং মোদির ওপর আস্থার প্রকাশ স্পষ্টতই ইঙ্গিত দেয় যে, বর্তমান ভূরাজনৈতিক সমীকরণে ভারতই বাংলাদেশের প্রধান নিয়ন্ত্রক শক্তি হয়ে উঠছে। আগামী দিনে বাংলাদেশ-ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্ক কীভাবে বিকশিত হয়, তা নিয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের গভীর নজর থাকবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ