ফারাক্কার প্রভাবে পদ্মা নদী এখন ধু-ধু বালুচর
বাংলাদেশের পদ্মা, যমুনা, তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্রসহ বিভিন্ন নদী ও শাখা-প্রশাখায় আজ দেখা দিয়েছে ধু-ধু বালুচর। বিশেষ করে ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে এই নদীগুলোর পানি প্রবাহ মারাত্মকভাবে কমে গেছে, যার ফলে উত্তরাঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানি সংকটও দেখা দিয়েছে। ভারতের একতরফা পানির ব্যবহার এবং গঙ্গা পানি চুক্তির ন্যায্যতা আদায়ে বাংলাদেশের অবস্থান সংকটে রয়েছে।
ফারাক্কা বাঁধের কারণে পদ্মা নদী ১৯৭৫ সালের পর থেকেই দুর্দশাগ্রস্ত। শুকনো মৌসুমে পদ্মা নদীর আয়তন প্রায় ৫০ শতাংশ কমে গেছে এবং পানির গভীরতা কমে ১৭.৮ শতাংশে নেমে এসেছে। নদী প্রবাহ কমে গেছে ২৬.২ শতাংশ। এই পরিবর্তন শাক-সবজি ও অন্যান্য কৃষিপণ্য উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে, এবং অনেক অঞ্চলে কৃষকরা চরম সংকটে পড়েছেন।
ফারাক্কা বাঁধের মাধ্যমে ভারত গঙ্গার পানি আটকে রেখে বাংলাদেশের নদীগুলোর পানি প্রবাহ বাধাগ্রস্ত করেছে। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশ গঙ্গা পানি চুক্তির মাধ্যমে পানির স্বাভাবিক প্রবাহ পাওয়ার দাবি করে আসলেও বাস্তবে এটি বাস্তবায়ন হয়নি। বর্ষাকালে কিছুটা পানি পাওয়া গেলেও বাকি সময় ধরে পানি না পাওয়ার কারণে নদীর জলাশয় শুকিয়ে গেছে এবং মাছসহ বিভিন্ন জলজ প্রাণী হারিয়ে গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শুষ্ক মৌসুমের আগেই পদ্মা পানিশূন্য হয়ে পড়ছে, যা পরিবেশ ও কৃষিতে বিপর্যয় সৃষ্টি করছে। চর ও বরেন্দ্র এলাকায় বৈরী আবহাওয়া সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে কৃষকরা চাষাবাদে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তাদের সেচের জন্য প্রয়োজনীয় পানি পাওয়া যাচ্ছে না, যার কারণে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বাধা আসছে।
এদিকে, নদী গবেষকরা মনে করছেন, পদ্মা নদী ও অন্যান্য নদীর নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য ব্যাপক ড্রেজিং প্রয়োজন এবং গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণ জরুরি। গঙ্গা ব্যারাজ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও এখনো এটি বাস্তবায়িত হয়নি।
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. লতিফুর রহমান সরকার বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ইতোমধ্যে ৪০-৫০ ফুট নিচে নেমে গেছে, যা আগামীতে আরও অবনতি হতে পারে। তিনি সতর্ক করে বলেন, যদি এ সমস্যা সমাধান না করা হয়, তবে পানির সংকট আরও তীব্র হবে।
ফারাক্কা চুক্তির নামে বাংলাদেশের মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছে। নদী গবেষক মাহবুব সিদ্দিকী বলছেন, গঙ্গা চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের পানির ভাগ প্রাপ্তি এখনও অমীমাংসিত, এবং যৌথ নদী কমিশনের কার্যক্রমও কার্যকর নয়। ভারত একতরফাভাবে পানি প্রত্যাহার করে বাংলাদেশের বিপর্যয়কে আরও গভীর করছে।
এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে গঙ্গা পানি চুক্তি পুনর্বিবেচনার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে শক্তিশালী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।