ছাগলকাণ্ডে গ্রেপ্তার মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ
‘ছাগলকাণ্ড’ নামে পরিচিত বিতর্কের কেন্দ্রে থাকা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তার স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকিকে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) নিশ্চিত করে যে, তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে কোন মামলায় তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তা প্রকাশ করা হয়নি।
এই কাহিনির সূত্রপাত হয় গত বছর কোরবানির ঈদের আগে। ইফাত নামে এক তরুণ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি পোস্টে জানান, তিনি ১৫ লাখ টাকা দিয়ে একটি ছাগল কিনেছেন। দ্রুতই ইফাতের পরিচয় সামনে আসে। তিনি দাবি করেন, তার বাবা মতিউর রহমান, যিনি এনবিআরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা।
১৫ লাখ টাকার ছাগল কেনার খবরটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঝড় ওঠে। সরকারি কর্মকর্তার পরিবারের এমন বিলাসী ব্যয়ের উৎস নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেন অনেকেই। তবে পরবর্তী সময়ে জানা যায়, ছাগলটির পুরো দাম না দিয়ে ইফাত সেটি আর কেনেননি।
বিতর্ক তুঙ্গে ওঠে, যখন মতিউর রহমান টেলিভিশনে ইফাতের সঙ্গে তার সম্পর্ক অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, ইফাত তার সন্তান বা আত্মীয় নয়। কিন্তু ইফাতের সঙ্গে তার পরিবারের ছবি ফেসবুকে প্রকাশ হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়।
এই ঘটনায় আরও রঙ যোগ করেন ফেনী-২ আসনের সংসদ সদস্য নিজাম উদ্দিন হাজারী। তিনি জানান, ইফাত তার মামাতো বোনের ছেলে এবং মতিউর রহমানের দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী থেকে জন্ম নেওয়া সন্তান।
মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে আগেও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছিল। তার বিপুল আয়ের উৎস নিয়ে সন্দেহের কথা বহুবার উচ্চারিত হয়েছে। যদিও তিনি সব সময়ই এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এনবিআরের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া, সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ থেকে বাদ পড়া, এবং আদালতের নির্দেশে তার পরিবারের সম্পদ ক্রোকের আদেশ—এই সবই তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগগুলোর ধারাবাহিক প্রভাব।
এবার ‘ছাগলকাণ্ড’ যেন মতিউর রহমানের বিতর্কিত অধ্যায়ের নতুন একটি সংযোজন। তার গ্রেপ্তার কীভাবে এই বিতর্কের সমাপ্তি টানে, তা এখন দেখার বিষয়।