ইরানের রাজধানী তেহরান থেকে মাকরানে স্থানান্তর
ইরান সম্প্রতি এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যেখানে দেশটির দীর্ঘদিনের রাজধানী তেহরানকে পরিত্যাগ করে নতুন রাজধানী হিসেবে মাকরান উপকূলীয় অঞ্চলকে নির্বাচন করা হয়েছে। এটি একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ, কারণ তেহরান প্রায় আড়াইশ’ বছর ধরে ইরানের রাজধানী হিসেবে কাজ করে আসছে। ইরান সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রধানত তেহরানে জনসংখ্যা বৃদ্ধি, পানি ও বিদ্যুৎ সংকট, এবং পরিবেশগত চাপ মোকাবিলার জন্য। এ পদক্ষেপে সরকারের মুখপাত্র ফাতেমা মুহাজেরানী জানিয়েছেন, মাকরান অঞ্চলে নতুন রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হবে এবং এই প্রকল্পটি বর্তমানে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।
ফাতেমা মুহাজেরানী আরও জানিয়েছেন যে, মাকরান অঞ্চলের স্থায়ী উন্নয়ন এবং সমুদ্রভিত্তিক অর্থনীতি গড়ার জন্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেয়া হচ্ছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য প্রকৌশলী, সমাজবিজ্ঞানী, অর্থনীতিবিদ এবং অন্যান্য বিশেষজ্ঞদের সহায়তায় কাজ চলছে। তবে, মাকরান অঞ্চলে নতুন রাজধানী স্থাপনের জন্য এখনও অনেক কাজ বাকি এবং সরকার এটি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন যে, তেহরান ভূমিকম্পের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, যার ফলে তেহরানে বসবাসরত মানুষের জন্য এটি দীর্ঘমেয়াদে নিরাপদ নয়। এছাড়াও, তেহরানে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপ এবং আয়-ব্যয়ের মধ্যে ভারসাম্যহীনতা রয়েছে, যা দেশের উন্নয়নে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে তেহরান থেকে রাজধানী স্থানান্তরিত করা একান্ত প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। তিনি আরও জানান, পারস্য উপসাগরের কাছাকাছি মাকরান অঞ্চলে নতুন রাজধানী স্থাপন শুরু হয়েছে, যা ভবিষ্যতে দেশের উন্নয়নকে সহায়তা করবে।
তবে সরকারের এই পদক্ষেপটি ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছে। অনেকেই বলছেন, নতুন রাজধানী গঠনের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হবে, যা ইরানের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হতে পারে। প্রায় ৩০ বছর ধরে ইরানে রাজধানী স্থানান্তরের আলোচনা চলছিল, তবে ২০১০ সালে পরিবেশগত ঝুঁকির কারণে আলোচনার নতুন দিক প্রাপ্ত হয়।
তেহরানে বর্তমানে যে পানি এবং বিদ্যুৎ সংকট চলছে, তা নতুন রাজধানীতে স্থানান্তরের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি আরও জোরালো করে তুলেছে। তেহরানের জনসংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে এবং এর ফলে শহরের অবকাঠামোগত চাপ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই সঙ্গে, তেহরান পরিবেশগত সংকটেরও সম্মুখীন হচ্ছে, যেমন অতিরিক্ত দূষণ, পানি সরবরাহের সমস্যা এবং ভূমিকম্পের ঝুঁকি। ফলে নতুন রাজধানী স্থাপনের সিদ্ধান্ত, সরকারের মতে, দেশের সামগ্রিক উন্নতির জন্য এক ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
নতুন রাজধানী স্থাপন নিয়ে সরকার ইতিমধ্যে প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত নেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। প্রকল্পটি এখনও প্রাথমিক অবস্থায় রয়েছে, কিন্তু এটি দীর্ঘমেয়াদে ইরানের উন্নয়নকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে বলেই আশা করছে সরকার।