শনিবার, ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫| ভোর ৫:২৭

বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জিমি কার্টারের জীবনাবসান

প্রতিবেদক
staffreporter
ডিসেম্বর ৩০, ২০২৪ ১১:৩৯ পূর্বাহ্ণ
বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জিমি কার্টারের জীবনাবসান

বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, জিমি কার্টারের জীবনাবসান

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও শান্তিতে নোবেল বিজয়ী জিমি কার্টার তার জন্মস্থান জর্জিয়ার প্লেইনসে নিজ বাড়িতে মারা গেছেন। ১০০ বছরের দীর্ঘ ও বর্ণিল জীবনের অবসান ঘটল এই নেতার। যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট কার্টার মানবাধিকার, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং গণতন্ত্রের পক্ষে কাজ করে বিশ্বজুড়ে প্রশংসা অর্জন করেছিলেন।

শুরুর জীবন

জিমি কার্টারের জন্ম ১৯২৪ সালের ১ অক্টোবর, জর্জিয়ার প্লেইন্স শহরে। তার বাবা জেমস আর্ল কার্টার ছিলেন একজন বাদাম চাষি ও ব্যবসায়ী। ছোটবেলা থেকেই কার্টার কৃষি ও ব্যবসার পরিবেশে বেড়ে ওঠেন। বাবার এই কৃষি ফার্মই পরবর্তী জীবনে তার জন্য রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রবেশের প্রেরণা জোগায়।

১৯৪৩ সালে কার্টার নেভাল অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হন। সেখান থেকে সফলতার সঙ্গে স্নাতক শেষ করে তিনি ডুবোজাহাজের সাবমেরিনার হিসেবে কাজ শুরু করেন। ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত তিনি নৌবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর তিনি ফার্মের দায়িত্ব নিতে ফিরে আসেন। ফার্ম পরিচালনার পাশাপাশি তিনি ধীরে ধীরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন।

রাজনীতিতে পদার্পণ

১৯৬২ সালে জিমি কার্টার জর্জিয়ার রাজ্য সিনেটের সদস্য নির্বাচিত হন। তার সততা এবং কঠোর পরিশ্রম তাকে অল্প সময়ের মধ্যেই রাজনীতিতে পরিচিত করে তোলে। ১৯৬৬ সালে তিনি প্রথমবার জর্জিয়ার গভর্নর হওয়ার চেষ্টা করেন, তবে সেবার তিনি ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হন। এরপর তিনি আরও মনোযোগ দিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করেন এবং ১৯৭০ সালে জর্জিয়ার গভর্নর নির্বাচিত হন।

প্রেসিডেন্ট পদে উত্থান

গভর্নর পদে সফলতার পর ১৯৭৬ সালে কার্টার ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়ন নিয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন। সেই সময় যুক্তরাষ্ট্র নানা সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সততা এবং নতুন নেতৃত্বের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তিনি সাধারণ জনগণের মন জয় করেন। নির্বাচনে তিনি রিপাবলিকান প্রার্থী ও তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জেরাল্ড ফোর্ডকে পরাজিত করে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৯তম প্রেসিডেন্ট হন।

প্রেসিডেন্ট হিসেবে কার্যক্রম

কার্টার প্রেসিডেন্ট হিসেবে শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং মানবাধিকারের পক্ষে কাজ করে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ প্রশংসিত হন। তার সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য কূটনৈতিক সাফল্য ছিল ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি, যা ইসরায়েল ও মিসরের মধ্যে দীর্ঘদিনের শত্রুতার অবসান ঘটায়।

তার শাসনামলে তেল সংকট, অর্থনৈতিক মন্দা এবং ইরানের বিপ্লবের মতো জটিল ইস্যু মোকাবিলা করতে হয়। যদিও এই সমস্যাগুলো তার জনপ্রিয়তায় প্রভাব ফেলে, তিনি নীতি এবং মানবিকতার প্রশ্নে আপস করেননি।

পরবর্তী জীবন ও অবদান

প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব ছাড়ার পর জিমি কার্টার মানবাধিকার এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় তার জীবনের অধিকাংশ সময় উৎসর্গ করেন। তিনি দ্য কার্টার সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেন, যা গণতান্ত্রিক নির্বাচন পর্যবেক্ষণ এবং রোগ নিয়ন্ত্রণের মতো কাজে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

২০০২ সালে তার এই মানবিক কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ বিরতি এবং শান্তি আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

ব্যক্তিগত জীবন

জিমি কার্টার ছিলেন একাধারে একজন লেখক, শিক্ষক, এবং ধর্মপ্রাণ খ্রিস্টান। তিনি ১৯৪৬ সালে রোজালিন স্মিথ কার্টারের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের সম্পর্ক ছিল ভালোবাসা এবং পারস্পরিক সমর্থনের অনন্য উদাহরণ।

শেষ অধ্যায়

কার্টার তার জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত নিজের জন্মস্থান প্লেইন্সে সাধারণ জীবনযাপন করছিলেন। ২০২৩ সালে তার স্বাস্থ্যের অবনতি হলে তিনি হাসপাতালে না গিয়ে বাড়িতে চিকিতসা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

জিমি কার্টারের জীবন ছিল সততা, মানবিকতা এবং জনসেবার এক উজ্জ্বল উদাহরণ। বাদাম চাষি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং বিশ্বশান্তির জন্য তার অবদান ইতিহাসে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে।

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - বানিজ্য ও অর্থনীতি

আপনার জন্য নির্বাচিত
শাহরিয়ার নাজিম জয়ের অভিনয়ের ২৫ বছর পূর্তি: মিশ্র অভিজ্ঞতার গল্প

শাহরিয়ার নাজিম জয়ের অভিনয়ের ২৫ বছর পূর্তি: মিশ্র অভিজ্ঞতার গল্প

সকালের জন্য পুষ্টিকর পানীয়: ডালিমের রস ও চিয়া বীজের উপকারিতা

সকালের জন্য পুষ্টিকর পানীয়: ডালিমের রস ও চিয়া বীজের উপকারিতা

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ২০২৫

এআই ও বিনিয়োগে জোর গুগলের, বিতর্কে কর্মী ছাঁটাই

এআই ও বিনিয়োগে জোর গুগলের, বিতর্কে কর্মী ছাঁটাই

ব্যয়বহুল ভ্রমণ করায় ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত

ব্যয়বহুল ভ্রমণ করায় ইরানের ভাইস প্রেসিডেন্ট বরখাস্ত

একসঙ্গে ছয় লক্ষ্যে হামলা, ইউক্রেনের শহরে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওরেশনিক’-এর ভয়াল তাণ্ডব

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী

মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে ছাত্রদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী

সুমাত্রার অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া এক প্রাচীন সভ্যতার রহস্য

সুমাত্রার অরণ্যে হারিয়ে যাওয়া এক প্রাচীন সভ্যতার রহস্য

আবুধাবিতে টিকটক লাইভে বাংলাদেশি তরুণের আত্মহত্যা

আবুধাবিতে টিকটক লাইভে বাংলাদেশি তরুণের আত্মহত্যা

তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করতে হলে অজু করবেন: বরকত উল্লাহ বুলু

তারেক রহমানের নাম উচ্চারণ করতে হলে অজু করবেন: বরকত উল্লাহ বুলু