বরগুনায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে পরিচিত হন মীর রিজন মাহমুদ নিলয় ও ফৌজিয়া তাসনীন আনিকা। আন্দোলনের মাঝেই শুরু হয় তাদের ভালো লাগা, যা পরে রূপ নেয় গভীর প্রেমে। অবশেষে, শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিকেলে, আন্দোলনের প্রায় পাঁচ মাস পর, তারা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন শুধু নতুন বাংলাদেশের স্বপ্নকেই জাগ্রত করেনি, বরগুনায় একটি নতুন সম্পর্কেরও সূচনা করেছে। এই আন্দোলনের সময়, যখন দেশের অসংখ্য মানুষ শহীদ হন, তখন নিলয় ও আনিকা খুঁজে পান একে অন্যের জীবনের সঙ্গী। তবে, দেশের স্বার্থে প্রয়োজনে আবারও আন্দোলনে নামার প্রস্তুতি তাদের রয়েছে বলে জানিয়েছেন।
৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে অংশ নেওয়ার সময় তাদের ভালো লাগার শুরু। এরপর ৭ আগস্ট প্রেমের প্রস্তাব ছাড়িয়ে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন নিলয়। ২৫ আগস্ট তারা পরিবারকে বিষয়টি জানান, এবং উভয় পরিবারের সম্মতিতে তাদের সম্পর্ক প্রণয়ে রূপ নেয়।
আন্দোলনের সময়কার অভিজ্ঞতা নিয়ে আনিকা বলেন, “নিলয়ের সততা এবং সাহস আমাকে মুগ্ধ করেছে। যেখানে তার আত্মীয়স্বজনের অনেকে নিষিদ্ধ সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত, সেখানেও সে তাদের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আন্দোলন করেছে। এটা আমাকে তার প্রতি দুর্বল করেছে। ৫ আগস্ট বিজয় মিছিলে তার যত্নশীলতা আমাকে আরও মুগ্ধ করে।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে আনিকা বলেন, “আমরা দুজনই শিক্ষার্থী, এবং আমাদের লক্ষ্য একত্রে সফল হওয়া। আমরা নিরপেক্ষ থেকে দেশের জন্য কাজ করব। কোনো অন্যায়ের পক্ষে থাকব না, বরং দেশের স্বার্থে তা প্রতিহত করব।”
নিলয় বলেন, “আনিকার সাহসিকতা এবং নেতৃত্ব আমাকে মুগ্ধ করেছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে তার সাহসিকতাপূর্ণ ভূমিকা দেখে আমি তার প্রতি আকৃষ্ট হই।”
নিলয় বরগুনা পৌরসভার আমতলারপাড় এলাকার মরহুম মীর মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে এবং আনোয়ার খান মডার্ন ইউনিভার্সিটির বিবিএ ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। অন্যদিকে, আনিকা বরগুনা পৌরসভার কলেজ রোড এলাকার মনোয়ারুল ইসলাম শামীমের মেয়ে এবং সরকারি ব্রজমোহন কলেজের রসায়ন বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী।
তাদের প্রেমের গল্প যেমন আন্দোলনের ইতিহাসের অংশ, তেমনি সাহস আর সততার এক নতুন দৃষ্টান্ত।