অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি জাপানের দৃঢ় সমর্থন, রোহিঙ্গা ও অর্থনৈতিক ইস্যুতে আলোচনা
অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেতৃত্বে বাংলাদেশে চলমান সংস্কার কার্যক্রমের প্রতি জাপান দৃঢ় সমর্থন জানিয়েছে। বৃহস্পতিবার টোকিওতে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ-জাপান পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এই সমর্থনের কথা জানায় জাপান।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পূর্বাঞ্চল বিষয়ক সচিব রাষ্ট্রদূত মো. নজরুল ইসলাম এবং জাপানের পক্ষে ছিলেন দেশটির পররাষ্ট্রবিষয়ক সিনিয়র উপমন্ত্রী আকাহোরি তাকেশি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহম্মদ ইউনূসের আসন্ন জাপান সফর, রোহিঙ্গা সংকট, নিরাপত্তা সহযোগিতা, আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয় বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।
বৈঠকে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, খাতভিত্তিক অংশীদারত্ব, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, সাংস্কৃতিক বিনিময় এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ বৃদ্ধির বিষয়েও আলোচনা হয়। উভয় পক্ষ ২০২৪ সালের জুনে ঢাকায় অনুষ্ঠিত আলোচনার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে ভবিষ্যৎ সহযোগিতার রূপরেখা নির্ধারণ করে।
বৈঠকে মানবসম্পদ উন্নয়ন, জ্বালানি রূপান্তর, যৌথ ঋণ কর্মসূচি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, দুর্যোগ ও ভূমিকম্প ব্যবস্থাপনা, বর্জ্য শোধনাগার, সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র, কৃষির যান্ত্রিকীকরণ এবং শিপইয়ার্ড আধুনিকীকরণে পারস্পরিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
জাপান তাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করে বলে, অন্তর্বর্তী সরকার এবং তার সংস্কার কর্মসূচির প্রতি তারা পূর্ণ সমর্থন জানায় এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
দুই দেশ রাজনৈতিক আস্থা জোরদার, উন্নয়ন কৌশলে অগ্রাধিকার নির্ধারণ এবং কৌশলগত অংশীদারত্ব পূর্ণ বাস্তবায়নে একমত হয়েছে। বাংলাদেশের পণ্যের জন্য শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার বজায় রাখতে জাপান ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে এবং ফলমূল ও শাকসবজিসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে কাজ করার আশ্বাস দিয়েছে।
‘বঙ্গোপসাগরীয় উদ্যোগ’ (বিগ-বি) এর আওতায় জাপান বাংলাদেশের সঙ্গে উচ্চমানের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে আরও গভীরভাবে সম্পৃক্ত থাকার ঘোষণা দেয়। তারা বাংলাদেশের উৎপাদন ও শিল্পখাতে জাপানি বিনিয়োগ বাড়াতে উৎপাদন সংস্থাগুলোকে উৎসাহিত করার কথাও জানায়। এছাড়া মুক্ত ও উন্মুক্ত ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যে বিগ-বি’র নতুন পরিকল্পনায় কাজ চালিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার করে।
বাংলাদেশ সহজ শর্তে উন্নয়ন সহায়তা, ঋণ পরিশোধের সময়সীমা বৃদ্ধি এবং বাজেট সহায়তার জন্য জাপানের সহায়তা কামনা করেছে। বৈঠকে রোহিঙ্গা সংকট নিয়েও আলোচনা হয়। জাপান মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের ভূমিকার প্রশংসা করে এবং তাদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য সহায়তা অব্যাহত রাখার আশ্বাস দেয়।