একটা মানবিক দেশ ডাক্তাররা চাইলে গড়তে পারেন: ডা. শফিকুর রহমান
স্বাস্থ্যসেবায় চিকিৎসকদের আরও বেশি মানবিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, একজন চিকিৎসক হওয়ার পেছনে শুধুমাত্র বাবা-মায়ের অবদান নয়, দেশের প্রতিটি স্তরের মানুষের ট্যাক্সের টাকা রয়েছে, যা দেশের সার্বিক উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। তাই চিকিৎসকদের আরও মানবিক হয়ে সেবামূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত করতে হবে। চিকিৎসকদের দায়িত্ব শুধু রোগীদের চিকিৎসার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং মানবিক মূল্যবোধ ও সেবার মধ্যে মিশে থাকতে হবে, যাতে তাদের কাজ আরও বেশি জনগণের জন্য উপকারী হয়।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে ন্যাশনাল ডক্টরস ফোরাম (এনডিএফ) আয়োজিত জাতীয় চিকিৎসক সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন। সমাবেশে বক্তব্য রাখার সময় ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসক হওয়ার পেছনে শুধু বাবা-মায়ের নয়, দেশের সব স্তরের মানুষের অবদান রয়েছে। “একজন ভিক্ষুকও ট্যাক্স দিয়ে সরকারের কাছে টাকা দেয় এবং সেই ট্যাক্সই সবার উন্নয়নে ব্যবহৃত হয়। এমনকি স্কুলের ইট-গাঁথন, বেসরকারি হাসপাতাল কিংবা সরকারি ভবন—সব কিছুতেই সাধারণ মানুষের ঘাম লেগে আছে,” বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, চিকিৎসকদের মূল দায়িত্ব হল, তারা যেন সব ধরনের মানুষের প্রতি দায়বদ্ধ থেকে কাজ করেন। চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা সহজ হয়। এ কারণেই চিকিৎসকদের মানবিক এবং দায়িত্বশীল হওয়ার ওপর জোর দিতে হবে। তিনি আরও যোগ করেন, “এটা আমাদের জন্য একটি বড় সুযোগ যে, আমরা সেবা দিয়ে মানুষের জীবন পরিবর্তন করতে পারি এবং আল্লাহর কাছে মর্যাদা লাভ করতে পারি।”
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসকদের শুধু চিকিৎসা দেবার জন্য নয়, তাদের আরও বেশি পড়াশোনা, গবেষণা এবং পরিশ্রম করতে হবে, যাতে তারা তাদের জ্ঞান ও দক্ষতায় দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে উন্নত করতে পারে। তিনি জানান, যে জাতি যত বেশি জ্ঞানী এবং প্রজ্ঞাময়, সে জাতি ততটাই সভ্য এবং উন্নত। চিকিৎসকদের গবেষণায় আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে, কারণ গবেষণা ছাড়া স্বাস্থ্যখাতের উন্নতি সম্ভব নয়। তবে দুর্ভাগ্যবশত, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্য গবেষণাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয় না, যা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে চিকিৎসকদের আরো বড় ভূমিকা পালন করতে হবে, কারণ তাদের মাধ্যমে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও চিকিৎসার মান উন্নত হতে পারে। তিনি বলেন, “যে কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ আমরা দেখতে চাই, সেটি গড়তে চিকিৎসকদের ভূমিকা অপরিহার্য।” ডা. শফিকুর রহমান উল্লেখ করেন, এনডিএফ-এর মাধ্যমে স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা সম্ভব এবং তিনি বিশ্বাস করেন, চিকিৎসকরা সেই পরিবর্তন আনতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে উন্নতি আসতে হবে এবং তার জন্য সবার সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। চিকিৎসকদের স্মার্ট সার্ভিস প্রদান ও সেবাপ্রত্যাশীদের যথাযথ সম্মান জানানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। “আমাদের প্রতিটি খাতে যদি ট্যাক্স দিয়ে সাধারণ মানুষ অবদান রাখে, তাহলে আমাদেরও তাদের সম্মান জানানো উচিত,” বলেন তিনি।
জামায়াত আমির আরও বলেন, রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সমর্থন পাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসকদেরও উচিত মানুষের জন্য কাজ করা এবং সেবার মধ্যে মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি থাকতে হবে। তিনি সকল চিকিৎসককে আহ্বান জানিয়ে বলেন, “মানবিক দেশ গড়তে ডাক্তারদের ভূমিকা হতে হবে অগ্রণী। চিকিৎসকরা যেন তাদের সেবা দিয়ে দেশকে মানবিক ও উন্নত করে তোলেন।”