ঈদের পরদিন ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত অন্তত ৭৫ জন
মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য অঞ্চলের মতো গাজা উপত্যকাতেও ৬ জুন পালিত হয় ঈদুল আজহা। পরদিন ৭ জুন শনিবার, ঈদের আনন্দ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ইসরায়েলি বিমান বাহিনীর হামলায় গাজা উপত্যকাজুড়ে অন্তত ৭৫ জন ফিলিস্তিনি নিহত হন এবং আরও প্রায় ১০০ জন আহত হন। এই তথ্য নিশ্চিত করেছে গাজার সিভিল ডিফেন্স বিভাগ।
নিহতদের মধ্যে ১৬ জন একই পরিবারের সদস্য এবং তাদের মধ্যে ৬ জন শিশু রয়েছে। এই পরিবারটি গাজা সিটির সাবরা এলাকায় বসবাস করত। সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসেল আলজাজিরাকে বলেন, বিমান হামলার আগে কোনো সতর্কবার্তা বা সাইরেন ব্যবহার করেনি ইসরায়েল। তিনি আরও জানান, অন্তত ৮৫ জন মানুষ এখনও ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন, যাদের উদ্ধার করা যায়নি।
তিনি এই হামলাকে ঠাণ্ডা মাথায় পরিকল্পিত গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করেন এবং জানান, নিহতদের সবাই ছিলেন বেসামরিক নাগরিক, যাদের অনেকেই নারী ও শিশু।
স্থানীয় বাসিন্দা হামেদ কেহিল জানান, অন্যান্য বছরে ঈদের সকালে তারা পরিবারের সদস্যদের নতুন পোশাকে সাজিয়ে আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করতেন। কিন্তু এবছর তাদের সেই সকাল শুরু হয়েছে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে শিশু ও স্বজনদের লাশ খুঁজে। আরেকজন বাসিন্দা হাসান আলখোর আলজাজিরাকে বলেন, “গত দুই বছরে গাজায় যা ঘটেছে, তার জন্য নেতানিয়াহুকে একদিন আল্লাহর সামনে জবাব দিতে হবে।”
অন্যদিকে, ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানায়, তাদের লক্ষ্য ছিল হামাসের সামরিক শাখা আল কাসেম ব্রিগেডের অন্তর্গত মুজাহিদিন ব্রিগেডের প্রধান আসাদ আবু শারিয়াকে হত্যা করা। তিনি ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের ইসরায়েল অভিযানে অংশ নিয়েছিলেন।
ঈদের দিনও (৬ জুন) গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনীর গোলাবর্ষণে অন্তত ৪২ জন নিহত হন। উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস ইসরায়েলের ভূখণ্ডে প্রবেশ করে অতর্কিত হামলা চালায়, যাতে ১,২০০ জন নিহত এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যাওয়া হয়।
এর প্রতিশোধ নিতে ইসরায়েল গাজায় ব্যাপক সামরিক অভিযান শুরু করে। গত ১৭ মাসে এই অভিযানে প্রাণ হারিয়েছেন ৫৪ হাজার ৬৭৭ জন ফিলিস্তিনি এবং আহত হয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার ৫৩০ জন। নিহত ও আহতদের অন্তত ৫৬ শতাংশই নারী ও শিশু।
সামরিক হামলার পাশাপাশি গত মার্চ থেকে গাজায় খাদ্য ও ত্রাণবাহী গাড়িও প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ইসরায়েল, যার ফলে খাদ্য, সুপেয় পানি ও ওষুধের তীব্র সংকটে ভয়াবহ দুর্দশায় দিন কাটছে গাজার মানুষের।
হামাসের হাতে জিম্মি হওয়া ২৫১ জনের মধ্যে এখনও প্রায় ৩৫ জন জীবিত রয়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আইডিএফ জানিয়েছে, তারা সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই তাদের মুক্ত করার পরিকল্পনা করছে।
জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় একাধিকবার ইসরায়েলকে গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে এবং ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলাও দায়ের করা হয়েছে। তবে প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, হামাসকে সম্পূর্ণ ধ্বংস ও জিম্মিদের মুক্ত না করা পর্যন্ত অভিযান চলবে।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সম্প্রতি গাজায় দুই মাসের যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। নেতানিয়াহু প্রস্তাবে সম্মতি দিলেও হামাস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন দেয়নি।