ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে একদিনে যুক্তরাজ্যে রেকর্ডসংখ্যক অভিবাসীর প্রবেশ
ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে একদিনেই যুক্তরাজ্যে পা রেখেছেন প্রায় ১২০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী, যা চলতি বছরের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। গত শনিবার ১ হাজার ১৯৪ জন অভিবাসী ১৮টি ছোট নৌকায় করে ব্রিটেনে প্রবেশ করেন বলে জানিয়েছে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রোববার (১ জুন) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়।
এই বিপুল সংখ্যক অভিবাসীর আগমনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ব্রিটেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জন হিলি। স্কাই নিউজের একটি টকশোতে তিনি বলেন, “গত পাঁচ বছরে যুক্তরাজ্য তার সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।” তিনি অভিযোগ করেন, মানবপাচারকারীরা অভিবাসীদের ‘ট্যাক্সির মতো’ উঠিয়ে এনে বিপজ্জনকভাবে চ্যানেল পার করাচ্ছে, যা অত্যন্ত ভয়াবহ ও দুশ্চিন্তার বিষয়।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত ১৪ হাজার ৮১১ জন অভিবাসী চ্যানেল পার হয়ে যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন। এই সংখ্যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪২ শতাংশ বেশি এবং ২০২৩ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ, যেখানে প্রবৃদ্ধির হার ৯৫ শতাংশ।
বিবিসির প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, ২০২৪ সালে ইংলিশ চ্যানেল পেরিয়ে ৩৭ হাজারেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী যুক্তরাজ্যে প্রবেশ করেছেন। এর আগের সর্বোচ্চ ছিল ২০২২ সালে, সেবছর মোট ৪৫ হাজার ৭৫৫ জন দেশটিতে প্রবেশ করেন। একদিনে আগমনের রেকর্ড আগে ছিল ২০২২ সালের ৩ সেপ্টেম্বর, সেদিন ১ হাজার ৩০৫ জন ব্রিটেনে ঢুকেছিলেন।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী হিলি জানান, এই সংকট মোকাবেলায় যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়েছে। তার মতে, ফরাসি কর্তৃপক্ষ এখন নতুন কৌশলে কাজ করছে যাতে নৌকা ছাড়ার আগেই পাচারকারীদের আটকানো যায়। তিনি বলেন, “আমরা ফরাসি কর্তৃপক্ষকে চাপ দিচ্ছি যেন এই সমঝোতার বাস্তবায়ন আরও দ্রুত হয়, এবং তারা কেবল তীরে নয়, পানিতেও অভিযান চালিয়ে এই অপরাধ ঠেকাতে পারে।”
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বিপজ্জনক নৌপথ বন্ধ করাই এখন তাদের প্রধান লক্ষ্য। কারণ এ ধরনের যাত্রা মানুষের জীবনের ঝুঁকি বাড়ায় এবং জাতীয় সীমান্ত নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলে। তারা বলেছে, মানবপাচারকারীরা কেবল অর্থ নিয়েই চিন্তা করে, মানুষের জীবন নিয়ে নয়। সরকার তাদের ব্যবসার প্রতিটি স্তরে আঘাত হানতে এবং বিচারের মুখোমুখি করতে সর্বাত্মক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে।
ব্রিটিশ সরকার জানিয়েছে, মানবপাচার রোধে তারা একটি সুসংগঠিত ও কার্যকর পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে, যার মাধ্যমে এসব চক্রের কার্যক্রম পুরোপুরি ধ্বংস করে দেওয়া হবে।