আন্তর্জাতিক আলোক দিবস আজ: আলো, উদ্ভাবন ও সমাজের জন্য এক অনন্য স্মরণ
আজ ১৬ মে, আন্তর্জাতিক আলোক দিবস। এদিনটিকে ঘিরে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে উদযাপিত হচ্ছে আলোর শক্তি, উদ্ভাবন ও সমাজে এর অবদানকে কেন্দ্র করে বিশেষ কার্যক্রম। এ দিবসটি কেবল একটি বিজ্ঞানস্মারক দিন নয়—এর পেছনে রয়েছে এক চমকপ্রদ ইতিহাস, একটি বৈপ্লবিক আবিষ্কার এবং বিজ্ঞানী থিওডর হ্যারল্ড মাইম্যানের অটল নিষ্ঠা।
১৯৬০ সালের জুন মাসে মার্কিন প্রকৌশলী ও পদার্থবিজ্ঞানী মাইম্যান লেজার রশ্মি আবিষ্কারের গবেষণাপত্র জমা দেন ফিজিক্যাল রিভিউ লেটার্স–এ। কিন্তু সে সময়কার সম্পাদক স্যামুয়েল গাউডস্মিট তা প্রত্যাখ্যান করেন। কারণ ছিল দুটি—একদিকে মেসার বিষয়ক লেখার ভিড়, অন্যদিকে রুবি ক্রিস্টাল ব্যবহার করে লেজার তৈরির ধারণাকে সে সময়ের অনেক বিজ্ঞানী অবাস্তব মনে করতেন। কিন্তু মাইম্যান যে কেবল ধারণা দেননি, তিনি লেজার তৈরির কাজও সম্পন্ন করেছিলেন তার আগেই—১৯৬০ সালের ১৬ মে তিনি সফলভাবে রুবি ক্রিস্টাল ব্যবহার করে লেজার রশ্মি তৈরি করেন। পরে ৬ আগস্ট নেচার জার্নালে প্রকাশিত হয় তাঁর গবেষণার সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন।
এই সাফল্য আলোকপ্রযুক্তির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। লেজার প্রযুক্তি চিকিৎসা, যোগাযোগ, শিল্প, সামরিক খাতসহ নানা ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনে। শক্তির উৎস হিসেবে আলোর গুরুত্ব ছাড়াও, এর ব্যবহারিক প্রয়োগ মানবজীবনে অসামান্য অবদান রেখে চলেছে।
আলোকবিজ্ঞান এবং আলোকপ্রযুক্তির গুরুত্ব তুলে ধরতে ইউনেসকোর উদ্যোগে ২০১৫ সালে উদ্যাপিত হয় ‘আন্তর্জাতিক আলোর বছর’। এরই ধারাবাহিকতায় ঘানা, মেক্সিকো ও রাশিয়ার প্রস্তাবনার ভিত্তিতে ইউনেসকো ২০১৭ সালে ১৬ মে দিনটিকে ‘আন্তর্জাতিক আলোক দিবস’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। প্রথমবার দিবসটি পালিত হয় ২০১৮ সালে। সেই স্মরণে, মাইম্যানের লেজার আবিষ্কারের ঐতিহাসিক দিনটিকে ঘিরেই আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক আলোক দিবস।
এবারের প্রতিপাদ্য—‘আলো, উদ্ভাবন, সমাজ’—এই তিনটি শব্দ যেন আধুনিক সভ্যতার চালিকাশক্তি। আলো শুধু বিজ্ঞান নয়, সমাজ বদলের প্রতীক হিসেবেও বিবেচিত হচ্ছে আজ।
4o