ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে প্রথমবার সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিল চীনের জে-১০সি ‘ভিগোরাস ড্রাগন’
সাম্প্রতিক ভারত-পাকিস্তান সংঘাতে প্রথমবারের মতো সরাসরি যুদ্ধে অংশ নিয়েছে চীনের তৈরি জে-১০সি ‘ভিগোরাস ড্রাগন’ ফাইটার জেট। ভারতের আধুনিক যুদ্ধবিমানের মোকাবিলায় পাকিস্তান ২০২২ সালে এই মাল্টিরোল যুদ্ধবিমান সংগ্রহ করে এবং দ্রুত নিজেদের বিমানবাহিনীতে যুক্ত করে। এবারকার সংঘাতে এই ফাইটার জেটের অংশগ্রহণ কেবল এর সামরিক সক্ষমতাই নয়, বরং বিশ্ববাজারে চীনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকেও তুলে ধরেছে।
জিও নিউজ জানায়, চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চেংদু এয়ারক্রাফট কর্পোরেশন তৈরি করেছে এই এক ইঞ্জিনবিশিষ্ট মাঝারি ওজনের মাল্টিরোল জেট। এটি আকাশে আধিপত্য বজায় রাখার পাশাপাশি আকাশ থেকে ভূমিতে আঘাত হানার কাজেও দক্ষ। যদিও ২০০৪ সালে জে-১০ সিরিজের প্রথম সংস্করণ চালু হয়, তবে জে-১০সি সংস্করণটি অনেক বেশি উন্নত, প্রযুক্তিগতভাবে আধুনিক এবং পশ্চিমা বিশ্বের এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের উপযোগী প্রতিদ্বন্দ্বী।
এই যুদ্ধবিমানের ক্যানার্ড-ডেল্টা উইং ডিজাইন, উন্নত AESA রাডার, ইলেকট্রনিক ওয়্যারফেয়ার প্রযুক্তি, লেজার গাইডেড পড ও উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র বহনের ক্ষমতা একে ভয়ঙ্কর রূপ দিয়েছে। এটি একসঙ্গে ১০টি লক্ষ্য শনাক্ত করে ৪টিতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূর থেকেই আঘাত হানতে সক্ষম। এই ফাইটার জেট পিএল-৮, পিএল-১১, পিএল-১২, পিএল-১৫ এর মতো চীনা ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও রাশিয়ান R-73 ও R-77 ক্ষেপণাস্ত্রও বহন করতে পারে। আকাশ থেকে স্থলভাগে আঘাত হানার জন্য এটি ৫০০ কেজির ছয়টি বোমা বা রকেটও বহন করতে পারে।
জে-১০সিতে ব্যবহৃত হচ্ছে চীনের নিজস্ব WS-10B ইঞ্জিন, যা পূর্ববর্তী রাশিয়ান AL-31 ইঞ্জিনের তুলনায় উন্নত। এতে চীনের প্রযুক্তিগত স্বনির্ভরতার অগ্রগতি স্পষ্ট হয়।
২০২৫ সালের এই সংঘাতে অংশ নিয়ে জে-১০সি তার কার্যকারিতা প্রমাণ করেছে। পাকিস্তানের প্রায় ৮০ শতাংশ সামরিক সরঞ্জাম বর্তমানে চীন থেকে আসে, যার ফলে এই বিমান যুক্ত হওয়ায় দেশটির বিমানবাহিনী আরও শক্তিশালী হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই যুদ্ধবিমান এবং এর দূরপাল্লার পিএল-১৫ ক্ষেপণাস্ত্র যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে সক্ষম।
এই সাফল্যের পর চীনের চেংদু কোম্পানির শেয়ারের দাম এক সপ্তাহে প্রায় ৩০ শতাংশ বেড়েছে। ইতিমধ্যেই মিসর, সৌদি আরব ও আলজেরিয়ার মতো দেশগুলো এই ফাইটার জেটের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে। ২০২৪ সালে দুবাই এয়ার শো-তে এই জেটের আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণও ছিল চীনের সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানির উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রকাশ।
জে-১০সি একসময় ‘নকল ডিজাইন’ হিসেবে সমালোচিত হলেও এখন এটি চীনের সক্ষমতা ও উদ্ভাবনের প্রতীক। উন্নত প্রযুক্তি, শক্তিশালী অস্ত্রব্যবস্থা ও কার্যকর নকশার সমন্বয়ে জে-১০সি এখন চীনের আধুনিক যুদ্ধবিমান শিল্পের গর্ব হয়ে উঠেছে।
সূত্র: জিও নিউজ