ইউরোপীয় ব্যবহারকারীর তথ্য চীনে পাঠানোর অভিযোগে টিকটককে ৫৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা
চীনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য স্থানান্তরের অভিযোগে জনপ্রিয় ভিডিও শেয়ারিং অ্যাপ টিকটকের বিরুদ্ধে ৫৩০ মিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ প্রায় ৬০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার জরিমানা করেছে আয়ারল্যান্ডের তথ্য সুরক্ষা কমিশন (ডিপিসি)। এই জরিমানাটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম বড় আর্থিক শাস্তি।
তদন্তে উঠে এসেছে, টিকটক শুরুতে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে, ইউরোপীয় ব্যবহারকারীদের কিছু তথ্য চীনে হোস্ট করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এসব তথ্য নিরাপদ রাখতে ব্যর্থ হয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। ডিপিসির উপকমিশনার গ্রাহাম ডয়েল জানান, চীনের আইন অনুসারে সেখানকার কর্তৃপক্ষ যে কোনো তথ্য চাইতে পারে—এই বিষয়টি আমলে নেয়নি টিকটক। এমনকি তারা প্রমাণ করতে পারেনি যে, চীনে অবস্থানরত কর্মীদের ইউরোপীয় তথ্য ব্যবহারে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছিল।
২০২০ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ব্যবহারকারীদের অজ্ঞাতে তথ্য চীনে স্থানান্তর করা হয়েছিল, যা জিডিপিআরের (EU’s GDPR) সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। টিকটক তাদের নীতিমালায় এসব তথ্য উল্লেখ না করায় অতিরিক্ত ৪৫ মিলিয়ন ইউরো জরিমানা করা হয়। ডিপিসি বলেছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ইউরোপীয় আইন অনুসারে টিকটককে তাদের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ব্যবস্থা সংশোধন করতে হবে, অন্যথায় চীনে তথ্য পাঠানো স্থগিত করা হবে।
টিকটকের ইউরোপীয় প্রতিনিধি ক্রিস্টিন গ্রাহন দাবি করেন, চীনা কর্তৃপক্ষ ইউরোপীয় তথ্য চায়নি এবং টিকটকও কোনো তথ্য দেয়নি। প্রতিষ্ঠানটি এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করবে বলেও জানিয়েছে।
ইতোমধ্যে টিকটক বলেছে, তারা ইউরোপে ‘ক্লোভার প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ১২ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগ করেছে, যেখানে ব্যবহারকারীদের তথ্য সাধারণত নরওয়ে, আয়ারল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষণ করা হয়। তবে চলতি বছরের এপ্রিলেই তারা স্বীকার করে যে, কিছু তথ্য চীনে হোস্ট করা হয়েছিল, যা তাদের আগের দাবির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
এই জরিমানার ঘটনা যুক্তরাষ্ট্রেও টিকটকের ওপর চাপ বাড়াবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে মার্কিন কংগ্রেস ২০২৪ সালে একটি আইন পাস করেছে, যাতে বলা হয়েছে—টিকটককে মার্কিন বাজারে ব্যবসা চালাতে হলে মূল প্রতিষ্ঠান বাইটড্যান্সকে মালিকানা ছাড়তে হবে। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে সময়সীমা বাড়িয়ে ১৯ জুন পর্যন্ত দিয়েছেন।
এছাড়াও বিভিন্ন দেশে সহিংস কনটেন্ট, ভুল তথ্য ছড়ানো এবং অস্বচ্ছ অ্যালগরিদম ব্যবহারের অভিযোগে একাধিকবার টিকটক নিষিদ্ধ হয়েছে। পাকিস্তান, নেপাল ও ফ্রান্সের নিউ ক্যালেডোনিয়ায় বিভিন্ন সময়ে প্ল্যাটফর্মটির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল।