বুধবার, ১৪ই মে, ২০২৫| বিকাল ৪:৩১

আবারও যুদ্ধের ছায়া ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে? চূড়ান্ত সতর্কতায় ইসলামাবাদ, ৩৬ ঘণ্টার সময়সীমা

প্রতিবেদক
staffreporter
এপ্রিল ৩০, ২০২৫ ৬:৫৬ অপরাহ্ণ
আবারও যুদ্ধের ছায়া ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে? চূড়ান্ত সতর্কতায় ইসলামাবাদ, ৩৬ ঘণ্টার সময়সীমা

আবারও যুদ্ধের ছায়া ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে? চূড়ান্ত সতর্কতায় ইসলামাবাদ, ৩৬ ঘণ্টার সময়সীমা

দুই প্রতিবেশী পরমাণু শক্তিধর দেশের মধ্যে সম্পর্কের টানাপোড়েন যেন ফের নিয়ে এসেছে যুদ্ধের আশঙ্কা। জম্মু-কাশ্মিরের পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে উত্তেজনা এখন চরমে। পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ও তথ্যমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বক্তব্যে এমন ইঙ্গিত মিলছে যে, যুদ্ধ যেন আর শুধু আশঙ্কা নয়—সম্ভাব্য বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারিভাবে জানানো হয়েছে, আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ; এই সময়ের মধ্যেই বড় ধরনের সামরিক অভিযান ঘটতে পারে বলে ধারণা করছে ইসলামাবাদ।

গত ২২ এপ্রিল, ভারতের জম্মু-কাশ্মিরে পেহেলগামে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী হামলায় কয়েকজন ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য নিহত হন। হামলার পর ভারত সরাসরি পাকিস্তানের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলে। এই অভিযোগ থেকেই উত্তেজনার শুরু, আর এরপর ক্রমেই দুই দেশের মধ্যকার কূটনৈতিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে। বর্তমানে তা সামরিক উত্তেজনার সর্বোচ্চ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে।

পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহম্মদ আসিফ এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “পরবর্তী দুই থেকে তিন দিন আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি কিছু ঘটে, তাহলে এই সময়ের মধ্যেই তা ঘটবে। আর যদি কিছু না ঘটে, তাহলে বোঝা যাবে—আমরা যুদ্ধ এড়াতে পেরেছি।” তিনি আরও বলেন, “এই অঞ্চলে যুদ্ধ এখন আর কল্পনা নয়, এটি বাস্তব সম্ভাবনা। পাকিস্তানের জনগণকে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে হবে।”

সামা টিভি ও জিও নিউজসহ পাকিস্তানের একাধিক গণমাধ্যমেও প্রতিরক্ষামন্ত্রী একই বার্তা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “যতক্ষণ পর্যন্ত কূটনৈতিকভাবে সম্ভব, আমরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। কিন্তু যদি তা ব্যর্থ হয়, তাহলে আমাদের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।”

এদিকে শুধু প্রতিরক্ষামন্ত্রী নন, পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারারও আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, “পাকিস্তানের কাছে নির্ভরযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে, যাতে বলা হয়েছে—ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলার পরিকল্পনা করছে।” তার ভাষায়, ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সেনাবাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দেওয়া হয়েছে প্রতিশোধমূলক অভিযানের জন্য।

আতাউল্লাহ তারার স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশ। বছরের পর বছর ধরে আমরা এই বিপদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন এবং রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।” পাশাপাশি তিনি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন—“ভারত যদি কোনো বেপরোয়া সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে তার জবাব অবশ্যই কঠোর ও উপযুক্তভাবে দেওয়া হবে।”

বর্তমানে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থা পুরোপুরি সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সীমান্তে অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের পাশাপাশি বিমান ঘাঁটি ও কৌশলগত স্থাপনাগুলোতেও সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ভারতের দিক থেকেও সীমান্ত টহল জোরদার করা হয়েছে বলে জানায় মিডিয়া রিপোর্ট। জরুরি সামরিক প্রস্তুতির কথাও উঠে এসেছে একাধিক সংবাদমাধ্যমে।

বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে যেকোনো ছোট ভুলই বড় ধরনের যুদ্ধের দিকে নিয়ে যেতে পারে। দুই দেশের এমন উত্তেজনা আন্তর্জাতিক মহলকেও শঙ্কিত করে তুলেছে। এখনো পর্যন্ত জাতিসংঘ কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে কোনো সরাসরি বিবৃতি আসেনি, তবে কূটনৈতিক চ্যানেল ব্যবহার করে দুই দেশকে সংযম দেখাতে আহ্বান জানানো হয়েছে বলে জানা গেছে।

এই অবস্থায় দুই দেশের সাধারণ মানুষও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। পাকিস্তানের সোশ্যাল মিডিয়াতে এখন সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ‘আসন্ন যুদ্ধ’। কেউ কেউ প্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করছেন, কোথাও কোথাও শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকটও দেখা দিয়েছে।

দক্ষিণ এশিয়ার পুরনো বৈরিতা যেন আরও একবার ভয়ানক রূপ নিতে চলেছে। সামনের ২৪ থেকে ৩৬ ঘণ্টা শুধু পাকিস্তান-ভারতের জন্য নয়, গোটা উপমহাদেশ ও বিশ্বের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যই এক অগ্নিপরীক্ষা। সময়ই বলে দেবে—এই উত্তেজনা কোথায় গড়ায়: যুদ্ধের বিভীষিকায়, নাকি শান্তির পথে?

মন্তব্য করুন
Spread the love

সর্বশেষ - সর্বশেষ