“গাজায় কোনও মানবিক সংকট নেই”—ইসরায়েলের দাবি, বাস্তবে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ ও মানব বিপর্যয়
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় টানা ১৮ মাস ধরে চালানো ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে নিহত হয়েছেন ৫২ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। নারী ও শিশুরাই এ হত্যাযজ্ঞের প্রধান শিকার। বোমার আঘাতে বিধ্বস্ত এই ভূখণ্ডে যখন খাবার, পানি, ওষুধের জন্য মানুষ ছটফট করছে, তখন ইসরায়েলের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে—“গাজায় কোনও মানবিক সংকট নেই।”
মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে তুরস্কভিত্তিক বার্তাসংস্থা আনাদোলু জানায়, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে দেওয়া এক বিবৃতিতে ইসরায়েলের উপ-রাষ্ট্রদূত ব্রেট জনাথন মিলার দাবি করেছেন, “আমাদের মূল্যায়নে দেখা যাচ্ছে, গাজায় এই মুহূর্তে কোনও মানবিক সংকট নেই।” তিনি জানান, গত যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েল ২৫ হাজারেরও বেশি ত্রাণবাহী ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে দিয়েছে, যাতে খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধ ছিল।
তবে ইসরায়েলের এই বক্তব্যকে স্পষ্টভাবে অস্বীকার করেছে জাতিসংঘ, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা ও স্বাধীন পর্যবেক্ষকরা। তাদের মতে, বাস্তবতা সম্পূর্ণ উল্টো। গাজায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয় চলছে, এবং সেটি দিনে দিনে আরও জটিল হয়ে উঠছে।
প্রসঙ্গত, গত ২ মার্চ থেকে ইসরায়েল গাজার সব সীমান্ত বন্ধ করে রেখেছে। ফলে কোনও খাদ্য, ওষুধ বা জরুরি মানবিক সহায়তা প্রবেশ করতে পারছে না। জাতিসংঘের মানবিক দপ্তর ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ইসরায়েল ইচ্ছাকৃতভাবেই এই দুর্ভিক্ষ তৈরি করছে—যা একটি যুদ্ধের হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত ফিলিস্তিনি দূত বলেছেন, “গাজায় বোমার কোনও অভাব নেই। কিন্তু পানি, খাবার, ওষুধ—এসব মানুষের মৌলিক চাহিদা থেকে ফিলিস্তিনিদের বঞ্চিত রাখা হচ্ছে। এটি কোনও দুর্ঘটনা নয়, বরং পরিকল্পিত মানবিক সংকট।”
উল্লেখ্য, চলতি বছরের ১৯ জানুয়ারি হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় চুক্তি ভেঙে যায়। এরপর ১৮ মার্চ থেকে আবারও গাজায় পূর্ণমাত্রার হামলা শুরু করে ইসরায়েল। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এই দফায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ইতোমধ্যেই ৫২ হাজার ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কড়া সমালোচনার মুখেও থামেনি ইসরায়েলের অভিযান। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) ২০২৪ সালের নভেম্বরে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ও তৎকালীন প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
একইসঙ্গে, হেগের আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যার’ মামলা এখনও চলমান রয়েছে।
মানবিক সংকট নেই—ইসরায়েল যতই দাবি করুক, বাস্তবে আজ গাজায় প্রতিটি পরিবারের সামনে দাঁড়িয়ে আছে বেঁচে থাকার প্রশ্ন। খাবারের বদলে ধ্বংস, ওষুধের বদলে অগ্নিগোলক, এবং সাহায্যের আশায় তাকিয়ে থাকা চোখগুলো প্রতিদিন হারাচ্ছে আশা ও জীবন।
এই প্রেক্ষাপটে, আন্তর্জাতিক মহলের আরও জোরালো পদক্ষেপ ও মানবিক হস্তক্ষেপ এখন সময়ের দাবি হয়ে উঠেছে