শেখ হাসিনাকে থামাতে বলেছিলেন ড. ইউনূস, মোদির চমকপ্রদ জবাব – ‘আমি পারব না!’
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোড়ন তুলেছে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এক বিস্ফোরক স্বীকারোক্তি।
কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যমআল জাজিরা‘কে দেওয়া এক একান্ত সাক্ষাৎকারে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস প্রকাশ্যে আনলেন এমন একটি ঘটনা, যা এর আগে কখনো সামনে আসেনি।
ড. ইউনূস জানিয়েছেন, ব্যাংককে অনুষ্ঠিতবিমসটেক সম্মেল চলাকালে তার সরাসরি বৈঠক হয়েছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীনরেন্দ্র মোদির সঙ্গে। সেই বৈঠকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে অনুরোধ করেছিলেন— শেখ হাসিনাকে যেন থামানো হয়। কারণ, হাসিনার প্রতিটি বক্তব্য বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে আরও অস্থিতিশীল করে তুলছিল বলে মনে করেন তিনি।
ড. ইউনূস বলেন,”আমি মোদিকে অনুরোধ করেছিলাম— হাসিনাকে যেন প্রকাশ্যে বক্তব্য দেওয়া থেকে বিরত রাখা হয়। তার প্রতিটি কথা দেশে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে, যা আমাদের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।”
তবে মোদির জবাব ছিল একেবারে স্পষ্ট এবং কিছুটা চমকপ্রদ। তিনি ড. ইউনূসকে জানান,
“আমি পারব না। ভারত এমন একটি দেশ যেখানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আমি কারও মুখ বন্ধ করতে পারি না।”ড. ইউনূস সাক্ষাৎকারে আরও বলেন,
“আমি বলেছিলাম, যদি শেখ হাসিনাকে রাখতে চান, রাখুন। কিন্তু তাকে যেন কথা বলার সুযোগ না দেওয়া হয়। কারণ, তার প্রতিটি কথা আমাদের জন্য বিপদ তৈরি করছে।নতুন বাংলাদেশ গঠনের স্বপ্ন
সাক্ষাৎকারের আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশে ড. ইউনূস তুলে ধরেন ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা। তিনি বলেন,
“আমরা আর পুরনো দিনে ফিরতে চাই না—যেখানে ফ্যাসিবাদী শাসন ছিল, যেখানে দুর্নীতি ছিল। আমরা চাই, শক্তিশালী, প্রতিষ্ঠাননির্ভর এক সরকার, যেখানে নিয়ম ও পদ্ধতির ঊর্ধ্বে কেউ থাকবে না।”নির্বাচন প্রসঙ্গে কী বললেন ড. ইউনূস?
জাতীয় নির্বাচন কবে হবে—এই প্রশ্নের উত্তরে ড. ইউনূস জানান,”যদি রাজনৈতিক দলগুলো সংক্ষিপ্ত সংস্কার প্যাকেজে একমত হয়, তবে চলতি বছরের ডিসেম্ব মাসেই নির্বাচন হতে পারে। আর যদি বড় ধরনের সংস্কারের দাবিতে সময় চাওয়া হয়, সেক্ষেতআগামী বছরের জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।”
তিনি জোর দিয়ে বলেন,”আমরা এমন একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চাই, যা বাংলাদেশ আগে কখনো দেখেনি। এটি হবে ইতিহাসের সেরা নির্বাচন।”রাজনীতিতে কী প্রভাব পড়বে?
ড. ইউনূসের এই বক্তব্য ইতোমধ্যে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। শেখ হাসিনাকে নিয়ে মোদির সঙ্গে তার কথোপকথন প্রকাশ্যে আসায় ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মাঝেও এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে।
এখন দেখার বিষয়, ড. ইউনূসের এই বিস্ফোরক সাক্ষাৎকার দেশের চলমান রাজনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে এবং সামনের জাতীয় নির্বাচন ঘিরে রাজনৈতিক ময়দানে কী নতুন সমীকরণ তৈরি হবে।