বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা চাইলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ
বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে যেখানে ভুল স্বীকারকে দুর্বলতা হিসেবে দেখা হয়, সেখানে এক ব্যতিক্রমী দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে তিনি বাবার একটি বিতর্কিত ঠিকাদারি লাইসেন্সের প্রসঙ্গে খোলাখুলি মন্তব্য করেন এবক্ষমা প্রার্থনা করেন বাবার হয়ে।
কী ঘটেছিল?
বিষয়টি সামনে আসে বুধবার রাতের দিকে, যখন একজন অনুসন্ধানী সাংবাদিজুলকারনাইন সায়ের ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে দাবি করেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের বাবা বিল্লাল হোসে— যিনি একজন স্কুল শিক্ষক— তার নামে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (LGED) থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছেন।
সেই পোস্টে লাইসেন্সের কপিও প্রকাশ করেন সাংবাদিক জুলকারনাইন, যা মুহূর্তেই সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা ও সমালোচনার জন্ম দেয়।
উপদেষ্টার প্রতিক্রিয়া
বিষয়টি জানার পর নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে ফেসবুকে বিস্তারিত পোস্ট দেন আসিফ মাহমুদ। সেখানে তিনি লেখ“প্রথমেই আমার বাবার ভুলের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছি। একজন সাংবাদিকের মাধ্যমে জানতে পারি, আমার বাবা একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স নিয়েছেন। বিষয়টি আমি জানতাম না। পরে বাবার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হই, তিনি জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর দপ্ থেকে একটি ঠিকাদারি লাইসেন্স গ্রহণ করেছেন।”
আসিফ জানান, স্থানীয় এক ঠিকাদার তার বাবাকে পরিচয় ব্যবহার করে লাইসেন্স নিতে অনুরোধ করেন, যাতে কাজ পাওয়ায় সুবিধা হয়। শিক্ষক বাবা, বিষয়টির গভীরতা না বুঝে, সেই পরামর্শে সায় দেন।
‘কনফ্লিক্ট অব ইন্টারেস্ট’ বুঝিয়ে বাতিল করানো হলো লাইসেন্স
আসিফ মাহমুদ ফেসবুকে আর“আমি দায়িত্বে থাকাকালীন এমন একটি লাইসেন্স থাকাস্পষ্টভাবে স্বার্থের দ্বন্দ্ব (conflict of interest)। এটি বোঝানোর পর আজ বাবার আবেদনের ভিত্তিতে লাইসেন্সটি বাতিল করা হয়েছে।”পোস্টের সঙ্গে তিনি লাইসেন্স বাতিলের সরকারি আদেশের কপিও সংযুক্ত করেছেন।
কী বলছেন সাংবাদিক?
সাংবাদিক জুলকারনাইন সায়ের তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে দাবি করেন, এই বছরের ১৬ মার্চ, কুমিল্লা জেলার স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বিল্লাল হোসেনের প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করেন। তিনি বিষয়টি যাচাই করে উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
প্রথমে আসিফ এ বিষয়ে অজ্ঞতা প্রকাশ করলেও, পরে স্বীকার করেন লাইসেন্সটি ছিল এবং সেটি তাঁর অজান্তেই করা হয়েছে।
আসিফ আরও জানান, লাইসেন্সটি ব্যবহার কোনো ধরনের সরকারি কাজে অংশ নেওয়া হয়নি এবং এখন তপুরোপুরি বাতিল করা হয়েছ।
সামাজিক মাধ্যমে প্রশংসা
এই ঘটনার পর অনেকেই উপদেষ্টার খোলামেলা স্বীকারোক্তি ও দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন। একজন উচ্চপদস্থ সরকারি উপদেষ্টা হিসেবে নিজের পরিবারের ভুল স্বীকার করে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া রাজনৈতিক শুদ্ধাচারের দৃষ্টান্ত বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।
রাজনীতির এই অস্থির সময়ে এমন এক স্বচ্ছ অবস্থান হয়তো ভবিষ্যতের জন্য ইতিবাচক বার্তা হয়ে থাকবে।